আমেরিকার লাখ লাখ নাগরিক ব্রডব্যান্ড সুবিধা পান না। অনেকে কম্পিউটার সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। ২০১২ সালের এক গবেষণায় জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের প্রধান শহর ক্লিভল্যান্ডের মানুষের বার্ষিক আয় ২০ হাজার মার্কিন ডলার। তবে তাদের ৫৮ শতাংশের ঘরে কোনো ব্রডব্যান্ড সংযোগ নেই কিংবা মোবাইল ফোনেও ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না তারা। মূলত ব্যয়বহুল হওয়ার কারণেই ইন্টারনেট ব্যবহারে এমন অবস্থা।
দুই বেড রুমের বাসিন্দা মার্সেলা পরিবারের কথাই ধরুন। এ পরিবারের ১৪ বছর বয়সী মা’নিয়াহ অঙ্ক কষতে ভালোবাসে। সে খান একাডেমির টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করে থাকে। কিন্তু এখন থেকে সে ঘরে আর ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করতে পারবে না। টাইম ওয়ার্নার কেব্ল্ থেকে ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিয়েছিলেন তার মা। খরচ কমাতে সে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ঘরে একটি স্মার্টফোন রয়েছে, তবে ছোট স্ক্রিনের কারণে খান একাডেমির টিউটোরিয়াল দেখতে অসুবিধায় পড়ে মা’নিয়াহ। কাছাকাছি একটি গ্রন্থাগার থাকলেও সন্ধ্যার পরে নিরাপত্তার অভাবে সেখানে একা একা যেতে পারে না সে। ওহাইও অঙ্গরাজ্যের এই একটি পরিবারই যেন যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল প্রভেদ ফুটিয়ে তুলেছে।
পিউ রিসার্চের এক জরিপ বলছে, দেশটির এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ইন্টারনেটের পেছনে অর্থ ব্যয় করে না। বিশেষ করে বেকার, সমাজসেবকসহ একাধিক চাকরি করছে এমন মানুষের ওপর চালানো হয় এ জরিপ। চৌত্রিশ মিলিয়ন আমেরিকান ব্রডব্যান্ডসুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে চাকরিসংক্রান্ত মারাত্মক অসুবিধায় পড়তে যাচ্ছে অনেকে। বর্তমানে ২০ জন প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানের একজন অনলাইনে উপার্জন করে থাকেন। দেশটিতে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর চাকরির সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করে তাদের ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিকস। এ প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী আগামী কয়েক বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আমেরিকায় পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
ক্লিভল্যান্ডের পাশাপাশি ডেট্রয়েটের কথাও বলা যায়। এ শহর দুটির ইন্টারনেট সংযোগ মোটেও সন্তোষজনক নয়। গ্রামীণ অঞ্চলের চিত্র আরও ভয়াবহ। পেনসিলভানিয়ার অ্যান্ডোভার শহরে কোনো কিছু ডাউনলোড করতে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। অথচ প্রতি সেকেন্ডে ডাউনলোড স্পিড ২৫ মেগাবাইট। আর সেকেন্ডে আপলোড স্পিড তিন মেগাবাইট করার ঘোষণা দিয়েছে ইউএস ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন। কিন্তু এ গতির স্পিড অধরা রয়ে গেছে গ্রামীণ অঞ্চলে। অ্যান্ডোভার পাবলিক লাইব্রেরিতে ফ্রি ওয়াইফাই চালু রয়েছে। অনেকে এ বিনামূল্যের ওয়াইফাই ব্যবহারের চেষ্টা করেন। কেউ কেউ গ্রন্থাগারের বাইরেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন, একটু ফ্রি ওয়াইফাই সংযোগের আশায়।
স্থানীয় সরকারের উচিত মৌলিক ফাইবার অপটিক অবকাঠামো উন্নয়নে সঠিক সংস্থা খুঁজে বের করা। ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা উচিত। অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্যের হান্টসভিল শহরে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমন প্রতিযোগিতা চালু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ শহরে ‘ডার্ক ফাইবার’ নামে মৌলিক ফাইবার অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। আইডাহো অঙ্গরাজ্যের অ্যামন শহরে ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন করে ব্যক্তিগত ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থার মধ্যে বিলিবণ্টন করা হয়েছে। এখন গ্রাহকরা ওয়েব ইন্টারফেস ব্যবহার করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দ্রুতগতির ডিজিটালসুবিধা উপভোগ করে থাকেন। প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত কেব্ল্ কিংবা অপটিকাল নেটওয়ার্কিংয়ের ওপর তাদের আর ভরসা করতে হয় না।
পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনসেবার মতো উচ্চগতির ইন্টারনেটসেবাও নাগরিক অধিকার। এর পাশাপাশি কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হলে নাগরিক জীবনযাপনে পরিবর্তন আসবে। নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য তাই সস্তায় দ্রুতগতির ইন্টারনেটসেবা চালু করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন।
Add Comment