নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের জন্য দুই প্রতিষ্ঠানকে সম্মতিপত্র (এলওআই) দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদের নেতৃত্বাধীন ‘নগদ ডিজিটাল’ এবং দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী স্কয়ার ও এসিআই গ্রুপের নেতৃত্বাধীন ‘কড়ি ডিজিটাল’ নামে দুই ব্যাংকের এলওআই দেয়া হবে। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৩০তম পরিচালনা পর্ষদের বোর্ড সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য ৫২টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে। তিন দফায় যাচাই-বাছাইয়ের পর ৯টি প্রতিষ্ঠানের নাম পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান বিমা কোম্পানি হওয়ার কারণে বাদ দেয়া হয়। বাকি আটটি প্রতিষ্ঠানের পাঁচটি ফিনটেক সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের জন্য লেটার অব ইনটেন্ট বা সম্মতিপত্র (এলওআই) দেয়া হয়েছে। বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠান এখন অনুমতি পাওয়া দুই প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালু করার ছয় মাস পর পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন দেয়া হবে। এরা হলোÑস্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক, নর্থেস্ট ডিজিটাল ব্যাংক এবং জাপান-বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক।
এছাড়া ৩টির প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংক সম্পৃক্ত। এ তিনটি হলো বিকাশ ও ব্র্যাক ব্যাংকের নেতৃত্বাধীন বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক, ১০ ব্যাংকের নেতৃত্বে ডিজিটেন এবং ব্যাংক এশিয়ার নেতৃত্বাধীন ডিজিটাল ব্যাংককে আলাদা লাইসেন্স দেয়া হবে না। তবে এসব আবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ডিজিটাল ব্যাংকিং উইং খোলার অনুমোদন দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালা তৈরি করার পরই তারা পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করতে পারবে।
গতকাল রোববার বৈঠক শেষে মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য ৫২টি আবেদন এসেছিল। এসব আবেদন মূল্যায়নে তিনটি কমিটি করা হয়। প্রাথমিক বাছাই, ব্যবসা ও কারিগরি এবং চূড়ান্ত মূল্যায়ন কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে নয়টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুত করে। প্রযুক্তি, ব্যবসা, নিরাপত্তা এসব দেখে মোট ১০০ মার্কিংয়ের ভিত্তিতে স্কোরিং করা হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান ৬০ বা তদূর্র্ধ্ব নম্বর পেয়েছে তাদের তালিকা পর্ষদে উপস্থাপন করা হয়। তিনি বলেন, পরিচালনা পর্ষদ প্রাথমিকভাবে দুটি প্রতিষ্ঠানের এলওআই দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রস্তুত করা তালিকার নয়টির মধ্যে একটি ছিল বিমা কোম্পানি লেড। সেটিকে পর্ষদ বিবেচনায় নেয়নি। বাকি আটটির মধ্যে তিনটির সঙ্গে ব্যাংকের সম্পৃক্ততা থাকায় তাদের আলাদা করে লাইসেন্স না দিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং উইং খোলার অনুমোদন দেয়া হবে। এ ছাড়া এলওআই দেয়া দুটি প্রতিষ্ঠানের সফলতার ভিত্তিতে বাকি তিনটির লাইসেন্স দেয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক চালুর অনুমতি পাওয়া নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের সঙ্গে বর্তমান উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি রয়েছে সামিট ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান ফরিদ খানসহ অন্যরা। আর কড়ি ডিজিটাল ব্যাংকের মূল উদ্যোক্তা হাবিবুল্লাহ এন করিম, তিনি সাবেক অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের স্বামী।এর আগে বাজেট বক্তৃতায় প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতায় দুই সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালাও চূড়ান্ত করে ফেলে। চল?তি বছ?রের ১৪ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি ডিজিটাল ব্যাংক নির্দেশিকা প্রকাশ করে। নির্দেশিকা অনুসারে, ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন জমা দেয়ার সুবিধার্থে গত ২১ জুন একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। লাইসেন্স পেতে আবেদনকারীদের প্রাথমিকভাবে ১ আগস্টের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। তবে এর মধ্যে সাড়া না পাওয়ায় আবেদনের সময়সীমা ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
ডিজিটাল ব্যাংক কী
ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য শুধু প্রধান কার্যালয় থাকবে। সেবা প্রদানে এই ব্যাংকের আর কোনো স্থাপনা, ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি), শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএম থাকবে না। সব সেবাই দেয়া হবে অ্যাপনির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে।
সেবা মিলবে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা। ডিজিটাল ব্যাংক ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ও অন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য চালু করতে পারবে। কোনো প্লাস্টিক কার্ড দিতে পারবে না। এ ব্যাংকের গ্রাহকরা অবশ্য অন্য ব্যাংকের এটিএম, এজেন্টসহ নানা সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। এটি ঋণপত্রও (এলসি) খুলতে পারবে না। শুধু ছোট ঋণ দেবে, বড় ও মাঝারি শিল্পে ঋণ দেয়া যাবে না। তবে আমানত নিতে কোনো বাধা নেই।
একেকটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য ন্যূনতম মূলধন লাগছে ১২৫ কোটি টাকা, যা প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৫০০ কোটি টাকা। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনে উদ্যোক্তাদের অর্ধেককে হতে হবে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
বাকি অর্ধেককে হতে হবে ব্যাংকিং, ই-কমার্স এবং ব্যাংকিং আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) ব্যাংকিং পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।