Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:17 am

ডিজেলচালিত কেন্দ্র এখনও বিদ্যুৎ খাতের বোঝা!

ইসমাইল আলী: বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত মেটাতে ২০০৯ সাল ও পরবর্তী কয়েক বছর বেসরকারি খাতে বেশকিছু রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লাইসেন্স দেয় সরকার। এগুলোর বড় অংশই ছিল ডিজেল ও ফানের্স অয়েলচালিত। যদিও মেয়াদশেষে বেশকিছু রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে, তবে চার বছর আগে বড় কয়েকটি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র তথা আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়। এর সঙ্গে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছোট ছোট কয়েকটি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র।

ডিজেলচালিত এসব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। ফলে এখনও বিদ্যুৎ খাতের বোঝা হয়ে আছে এ কেন্দ্রগুলো। আর এগুলোর উচ্চ ব্যয়ের প্রভাবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় বেড়েই চলেছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ২০২০-২১ অর্থবছরের উৎপাদন ব্যয়ের চিত্র বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এতে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল (আমদানিসহ) ৭৬ হাজার ৬৭০ দশমিক ৪৫ গিগাওয়াট ঘণ্টা। উৎপাদন ও আমদানি মিলিয়ে এ খাতে মোট ব্যয় হয়েছে মোট ৪৮ হাজার ২৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ছয় টাকা ২৯ পয়সা। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ ব্যয় ছিল পাঁচ টাকা ৯১ পয়সা। অর্থাৎ গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় বেড়েছে ৩৮ পয়সা।

ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরাবরেই মতোই গত অর্থবছরও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে সবচেয়ে কম ব্যয় হয় হাইড্রো তথা জলবিদ্যুতে। ২০২০-২১ অর্থবছর এ খাতে উৎপাদন করা হয় ৭০৯ দশমিক ৩৯ গিগাওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এতে ব্যয় হয় ১৭৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় পড়ে মাত্র দুই টাকা ৫০ পয়সা।

এর পরই রয়েছে গ্যাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়। এ জ্বালানিতেই সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় দেশে। গত অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার ২৬৫ দশমিক শূন্য দুই গিগাওয়াট ঘণ্টা, যা মোট উৎপাদনের ৫৯ শতাংশের বেশি। এতে মোট ব্যয় হয় ১৪ হাজার ৭১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় পড়ে তিন টাকা ২৫ পয়সা।

এদিকে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে গড়ে ব্যয় হয় পাঁচ টাকা ৭৭ পয়সা। গত অর্থবছর দেশটি থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ ছিল আট হাজার ১১৫ দশমিক ৮১ গিগাওয়াট ঘণ্টা। আর কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোয় গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় চার হাজার ৭৬৭ দশমিক ১৫ গিগাওয়াট ঘণ্টা। এতে মোট ব্যয় হয়েছে চার হাজার ১৬৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় পড়ে আট টাকা ৭৪ পয়সা। এর বাইরে অন্যান্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ১০ টাকার বেশি।

তথ্যমতে, গত অর্থবছর দেশে নবায়নযোগ্য তথা বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১৪০ দশমিক ২৩ গিগাওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয়েছে ১৭৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ফলে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় পড়ে ১২ টাকা ৪৩ পয়সা। আর ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রগুলোয় গত অর্থবছর উৎপাদন করা হয় ১৭ হাজার ১৩৭ দশমিক শূন্য পাঁচ গিগাওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এতে ব্যয় হয়েছে ২১ হাজার ৭৫৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় পড়ে ১২ টাকা ৬৯ পয়সা।

গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ব্যয় পড়ে বরাবরের মতোই ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলোয়। এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ৫৩৫ দশমিক ৮১ গিগাওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় দুই হাজার ৫৭৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ৪৮ টাকা তিন পয়সা।

পিডিবির চেয়ারম্যান মো. বেলায়েত হোসেন এ প্রসঙ্গে শেয়ার বিজকে বলেন, গত দুই বছরে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ডিজেলচালিত কেন্দ্রই বেশি ছিল। এছাড়া ডিজেলচালিত রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোনো কেন্দ্রের চুক্তিও নবায়ন করা হয়নি। তবে ডিজেলচালিত বড় আইপিপিগুলো পাঁচ বছরের জন্য স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যেগুলো এখনও চালু আছে।

তিনি আরও বলেন, গত অর্থবছর গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় ডিজেলচালিত বেসরকারি আইপিপিগুলোয় বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়। এজন্য এসব কেন্দ্রের গড় ব্যয় বেশি পড়েছে। তবে এসব কেন্দ্রের মেয়াদ আর দুই বছর আছে। এরপর ডিজেলচালিত কেন্দ্রের চাপ কমে আসবে। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয়ও কমবে বলে আশা করা যায়।