Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 2:18 pm

ডিজেলের দাম বেড়ে ২.৩৭ গুণ পেট্রোল-অকটেন ১.৬৯ গুণ

ইসমাইল আলী: আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে থাকলেও দেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয় গত ৬ আগস্ট। তবে ডিজেল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস ও আগাম কর অব্যাহতির পর ২৯ আগস্ট কিছুটা কমানো হয়েছে তেলের দাম। এরপরও জ্বালানি তেলের দাম দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে নেপাল।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৩ বছর আট মাসে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে মোট সাত দফা। আর কমানো হয়েছে মাত্র তিনবার। এর মধ্যে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে সাতবার ও কমানো হয়েছে তিনবার। আর পেট্রোল ও অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে ছয়বার ও কমানো হয়েছে দুইবার।

২৯ আগস্ট দাম কমানো সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জ্বালানি বিভাগ জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২৮ আগস্ট ডিজেলের ওপর আরোপীয় সমুদয় আগাম কর অব্যাহতি এবং আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশের পরিবর্তে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণ করায় ভোক্তা পর্যায় জ্বালানি তেলের (ডিজেল, অকটেন ও পেট্রোল) মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। এছাড়া কেরোসিনের দামও ডিজেলের সমান।

সর্বশেষ মূল্যহার অনুযায়ী, ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ১০৯ টাকা, অকটেন ১৩০ টাকা ও পেট্রোল ১২৫ টাকা। আর বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় ২০০৯ সালের শুরুতে ডিজেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ৪৬ টাকা, অকটেন ৭৭ টাকা ও পেট্রোল ৭৪ টাকা। অর্থাৎ ১৩ বছর আট মাসে ডিজেলের মূল্য বেড়ে হয়েছে দুই দশমিক ৩৭ গুণ। আর পেট্রোল ও অকটেনের মূল্য এ সময় বেড়ে এক দশমিক ৬৯ গুণ হয়েছে।

বিপিসির তথ্যমতে, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছিল। সে সময় প্রতি লিটার ডিজেলের দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি লিটার ৪৬ টাকা। আর পেট্রোল প্রতি লিটার ৭৪ ও অকটেন ৭৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের এক সপ্তাহের মাথায় শুধু ডিজেলের দাম লিটারে দুই টাকা কমানো হয়। সে সময় (১৩ জানুয়ারি) এর দাম নির্ধারণ করা হয় লিটারে ৪৪ টাকা।

এরপর সোয়া দুই বছরের বেশি সময় দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য স্থিতিশীল ছিল। তবে ২০১১ সালে চার দফা বাড়ানো হয় সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম। এর মধ্যে ৬ মে দুই টাকা করে বাড়ানো হয় সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম। এতে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম দাঁড়ায় ৪৬ টাকা, পেট্রোল ৭৬ টাকা ও অটকেন ৭৯ টাকা। এর চার মাসের মাথায় আবার সব ধরনের জ্বালানির দাম পাঁচ টাকা করে বাড়ানো হয়। ফলে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ টাকা, পেট্রোল ৮১ টাকা ও অকটেন ৮৪ টাকা।

ওই বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আরও দুই দফায় সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম পাঁচ টাকা করে মোট ১০ টাকা বাড়ানো হয়। এর মধ্যে ১১ নভেম্বর প্রতি লিটার ডিজেলের দাম দাঁড়ায় ৫৬ টাকা, পেট্রোল ৮৬ টাকা ও অকটেন ৮৯ টাকা। আর ৩০ ডিসেম্বর এ দাম আরও বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬১ টাকা, ৯১ টাকা ও ৯৪ টাকা। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে আবারও তেলের দাম বাড়ানো হয়। এতে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম হয় ৬৮ টাকা, পেট্রোল ৯৬ টাকা ও অকটেন ৯৯ টাকা।

এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে থাকে জ্বালানি তেলের দাম। তবে দেশের বাজারে তা সমন্বয় না করায় বিভিন্ন মহলের সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পেট্রোল ও অকটেনের দাম লিটারে ১০ টাকা এবং ডিজেলের দাম তিন টাকা কমানো হয়। এতে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম করা হয় ৮৬ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও ডিজেল ৬৫ টাকা।

যদিও এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমে যায়। কিন্তু দেশের বাজারে তা সমন্বয় করা হয়নি। এমনকি করোনার সময় ২০২০ ও ২০২১ সালে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ইতিহাসের সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে যায়। কিন্তু তখনও দেশে কমানো হয়নি দাম। এতে বিপিসির মুনাফা বাড়তে থাকে। ২০২০-২১ অর্থবছর রেকর্ড ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করে সংস্থাটি। আর ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত সাত বছরে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে বিপিসি।

এদিকে সাড়ে পাঁচ বছর পর গত নভেম্বরে দেশের বাজারে শুধু ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়। সে সময় এ জ্বালানি পণ্যটির দাম নির্ধারণ করা হয় লিটারে ৮০ টাকা। এর প্রায় ৯ মাস পর গত ৬ আগস্ট সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম গড়ে ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এটি ছিল দেশের ইতিহাসে তেলের দাম বৃদ্ধির রেকর্ড। সে সময় প্রতি লিটার ডিজেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১১৪ টাকা, পেট্রোল ১৩০ টাকা ও অকটেন ১৩৫ টাকা।

যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে এর আগে থেকেই তেলের দাম কমছিল। এমনকি চলতি মাসে আট মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ পর্যায়ে পৌঁছায় দাম। এরপর কমানো হয় ডিজেলের আমদানি শুল্ক। পাশাপাশি আগাম করও প্রত্যাহার করা হয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ শুল্ক হার বহাল থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানায় এনবিআর। এতে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা করে কমানো হয়। যদিও দাম কমানোয় ডিজেলে বিপিসির লোকসান বাড়বে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় জ্বালানি বিভাগ। তবে পেট্রোল ও অকটেনে মুনাফা অব্যাহত থাকবে বিপিসির।