ইসমাইল আলী: পায়রা বন্দর থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে আগ্রহী ব্রিটেনের ডিপি রেল লিমিটেড। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫০ কোটি ডলার বা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। আর নির্মাণ-পরবর্তী পরিচালনার মেয়াদ (কনসেশন পিরিয়ড) ধরা হয়েছে ৯৯ বছর। ডিপি রেইলের এ প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছে রেলওয়ে। বিষয়টি নিয়ে আজ আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে বসছে রেলপথ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
তথ্যমতে, পায়রাবন্দর থেকে ঢাকা পর্যন্ত কনটেইনার পরিবহনে ডেডিকেটেড (পৃথক) রেলপথ নির্মাণ করতে চায় পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ। এজন্য গত বছর এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহ্বান করা হয়। এতে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন জিটুজি ভিত্তিতে এবং ডিপি রেল পিপিপির ভিত্তিতে এফআইর মাধ্যমে রেলপথটি নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিপি রেলের বিপরীতে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) ইস্যুর সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি ডিপি রেলের সঙ্গে নন-বাইডিং সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ।
রেলপথটি নির্মাণে ৭৫০ কোটি ডলার ব্যয় প্রস্তাব করে ডিপি রেল। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি এককভাবে বাস্তবায়ন করলে কনসেশন পিরিয়ড ধরা হয়েছে ৯৯ বছর। আর ব্রিটেনের রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে যৌথভাবে রেলপথটি নির্মাণ করলে কনসেশন পিরিয়ড হবে ৬০ বছর। তবে ১৯৯৬ সালের রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী রেলপথ নির্মাণের এখতিয়ার বাংলাদেশ রেলওয়ে। তাই প্রকল্পটি হস্তান্তরে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করা হয়েছে।
সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকা থেকে পায়রাবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি কারিগরিভাবে বেশ জটিল এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। ডিপি রেল লিমিটেডের প্রস্তাবনা অনুযায়ী এ ব্যয় ৭৫০ কোটি ডলার। বিশাল এ কর্মকাণ্ড বিস্তারিত জরিপ ও ডিজাইন ছাড়া গ্রহণ করা উচিত হবে না। এছাড়া কোনো প্রকল্পের ব্যয় ২৫ কোটি টাকার বেশি হলে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশনা রয়েছে। তাই প্রকল্পটির ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়।
কার্যপত্রে আরও বলা হয়, ‘ইওআই-এ শুধুমাত্র এফডিআই ভিত্তিতে অর্থায়ন প্রস্তাব কেন আহ্বান করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে জিটুজি বা প্রচলিতভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কী সমস্যা রয়েছে। এছাড়া পিপিআর অনুসারে ইওআই আহ্বানের পর কমপক্ষে ৪-৭টি কোম্পানিকে শর্টলিস্ট করে আরএফপি ইস্যুর শর্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করে আরএফপি ইস্যুর সুপারিশ কেন করা হয়েছে। কেন দ্বিতীয়বার ইওআই আহ্বান করা হয়নি এবং কেন আরএফপি ইস্যু না করে এমওইউ সইয়ের সুপারিশ করা হয়েছে তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।’ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যথাযথ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল বলেও কার্যপত্রে মন্তব্য করা হয়েছে। এছাড়া ডিপি রেলের প্রস্তাবটি বাস্তবায়নে পিপিপি নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে কি না, তাও জানা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফিরোজ সালাহ্ উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ঢাকা-পায়রাবন্দর রেলপথ প্রকল্পটি পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে। রেলপথটি নির্মাণে ডিপি রেলের সঙ্গে পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষের কী ধরনের আলোচনা হয়েছিল, কীভাবে রেলপথটি নির্মাণ করা হবে, কী কী শর্ত থাকবে এসব বিষয় এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বৈঠকে এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হবে।
উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ শিগগিরই শুরু করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। আর ভাঙ্গা থেকে পায়রাবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। ফলে ঢাকা-পায়রাবন্দর সরাসরি রেলপথ নির্মাণেও জটিলতা রয়েছে। এদিকে পায়রাবন্দর উন্নয়নে ২০টি প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর আওতায় ১৮তম প্যাকেজ হলো ঢাকা থেকে পায়রাবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ। এজন্য গত বছর ইওআই আহ্বান করে পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে গত ২ মে প্রথম দফা বৈঠক করে নৌপরিবহন ও রেলপথ মন্ত্রণালয়। সেখানে প্রকল্পটি রেলওয়েতে হস্তান্তরে এক মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তবে এর মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি দুই মন্ত্রণালয়। পরে সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শরণাপন্ন হয় দুই মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে বৈঠক করে দুই মন্ত্রণালয়। সেখানে প্রকল্পটি রেলওয়েতে হস্তান্তরের সুপারিশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক যাচাই-বাছাই করছে রেলওয়ে। যদিও পুরো রেলপথটি সিঙ্গেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ডিপি রেল ডাবল লাইন নির্মাণের সুপারিশ করেছিল।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে সিঙ্গেল লাইন নির্মাণ করা হলেও ডাবল লাইন নির্মাণের অপশন রাখা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করে রাখা হবে। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া পায়রাবন্দর নির্মাণ সম্পন্ন হলে কন্টেইনার পরিবহনের চাহিদা বাড়লে রেলপথটি ডাবল লাইনে রূপান্তর করা যাবে।
Add Comment