ডিভিএস বাস্তবায়ন হলে আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে: আইসিএবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ডিভিএস) বাস্তবায়ন করা হলে এনবিআরের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে। একই সঙ্গে কর সংস্কার ও কর জিডিপির উন্নতি এবং রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে বলে জানিয়েছেন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান।

তিনি বলেন, কর-জিডিপি অনুপাতের প্রকৃত উন্নয়নের জন্য করের নেট সম্প্রসারণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কর নেট সম্প্রসারণে সরকারকে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে।

গতকাল শনিবার সিএ ভবনে আইসিএবি জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। তাতে বাজেট নিয়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের ভাবনা সাংবাদিকদের সমনে তুলে ধরেন আইসিএবি’র প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজামান এফসিএ। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন

 আইসিএবি’র টেক্সেশন ও করপোরেট ল’জ কমিটির চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীর, এফসিএ।

মনিরুজ্জামান বলেন, আইসিএবি মনে করে, ডিভিএস ব্যবস্থা বাস্তবায়নে এনবিআর এবং আইসিএবির ডিভিএসের মতো যৌথ উদ্যোগ কাক্সিক্ষত রাজস্ব অর্জনে সহায়তা করবে। এই ডিভিএস আর্থিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে আসবে, সেই সঙ্গে কর সংস্কার ও কর জিডিপি অনুপাতের উন্নতি এবং রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতেও অবদান রাখবে।

মনিরুজ্জামান আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বৈশ্বিক সংকট, ডলার সংকট, ব্যবসা-বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে মন্দা এবং অন্যান্য বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারের দুই লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন বাজেট বাংলাদেশের এগিয়ে নেয়ার জন্য একটি উৎসাহজনক পদক্ষেপ। সেই সঙ্গে ন্যূনতম আয়কর দুই হাজার টাকা নির্ধারণকে আইসিএবি ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।

সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চালক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ন্যূনতম কর নতুন নয়। ৮২ (সি) ধারায় ব্যাবসায় লাভ না হলেও বা অতিরিক্ত উৎসে কর আদায় করা হলেও ন্যূনতম আওতায় কর আদায়, অনাদায়ে সুদ আরোপনসহ জরিমানার আইন কার্যকর আছে।

হুমায়ুন কবীর বলেন, বর্তমানে অনেক ব্যাংক ডিপোজিট হোল্ডার আছেন বাস্তবে কর দেন (যা উৎসে কেটে রাখা হয়), কিন্তু রিটার্ন জমা দেন না। রিটার্ন জমার আবশ্যকতার কারণে (ই-টিন-এর পরিবর্তে) অনেকের রিফান্ড ক্রিয়েট হচ্ছে। তাদের ফাইল মেইনটেইন করতে সার্টিফিকেট ইস্যুর প্রয়োজন হতে পারে, তবে কস্ট রিকভারির জন্য এই ট্যাক্স ইম্পোজিশন অনৈতিক হবে না। এতে সবচেয়ে বড় যুক্তি হলো ট্যাক্স নেট তথা রিটার্ন দাতার সংখ্যা বাড়বে। এর বিরোধিতা করা নিজেদের পায়ে কুড়াল মারার সমান হবে।

আইসিএবি’র বাজেট প্রস্তাবনা

বিগত বছরগুলোর মতো চলতি বছরেও আইসিএবি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ২০২৩-২৪ বাজেট-সংক্রান্ত রাজস্ব আইন, যেমন ‘আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪’ ও ‘আয়কর বিধি ১৯৮৪’, ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২’ এবং ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা ২০১৬’-সহ অন্যান্য আইন ও বিধির ওপর প্রস্তাবনা প্রেরণ করেছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু বাস্তবতাভিত্তিক উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের প্রশংসা করেছে আইসিএবি। এর মধ্যে রয়েছেÑ১. পরিবেশ সারচার্জ প্রবর্তন, যা পরিবেশ রক্ষা করবে, যানবাহনের সংখ্যা কমাবে এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ব্যবহার বাড়াবে। ২. একাধিক যানবাহনে বিভিন্ন সিসি বা কিলোওয়াট-ভিত্তিক পরিবেশগত সারচার্জ আরোপ। ৩. ব্যবসা সহজীকরণের লক্ষ্যে মার্কেটপ্লেসকে পণ্যের অনলাইন বিক্রির সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা। ৪. আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন উৎসাহিতকরণ এবং স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে করের বোঝা কমাতে অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল উৎপাদন পর্যায়ে পাঁচ শতাংশের বেশি ভ্যাট ছাড়ের প্রস্তাব। ৫. রিবেট বা রেয়াত গণনার অস্পষ্টতা দূর করার জন্য আংশিক রিবেটের সূত্রে পরিবর্তন। ৬. বন্ডেড পণ্যের ছাড়পত্রের জন্য সাবেক বন্ড বিল অব এন্ট্রি জমা দেয়া এবং সেই সঙ্গে একে চূড়ান্ত মীমাংসাকরণের জন্য বিল অব এন্ট্রির সংজ্ঞা প্রতিস্থাপন করা। ৭. স্থানীয় শিল্প রক্ষার জন্য কিছু পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির জন্য গৃহীত উদ্যোগ।

এক প্রশ্নের জবাবে মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টরা সরকারের রাজস্ব আহরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০