নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক গত সমাপ্ত হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। এতে ব্যাংকটির প্রকৃত মুনাফা হার (ইল্ড) শূন্য। এ কারণে ডিভিডেন্ড (লভ্যাংশ) গেইন থেকে বঞ্চিত হয়েছে শেয়ারহোল্ডাররা। ওই সময় তুলনামূলকভাবে শেয়ারদরও কম ছিল। গত কয়েক দিন ধরে ব্যাংকটির শেয়ারদরে বেশ উল্লম্ফন দেখা গেছে।
বেসরকারি খাতের আরেক ব্যাংক ডাচ্-বাংলা গত সমাপ্ত হিসাববছরে ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আর প্রকৃত মুনাফার হার দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক ৫৭ শতাংশ। অথচ ব্যাংকটির স্থায়ী আমানতের সুদের হার তিন দশমিক ৪০ থেকে সাড়ে তিন শতাংশ। এতেও ডিভিডেন্ড গেইন থেকে বঞ্চিত হয়েছে বিনিয়োগকারীরা। তবে ব্যাংকটির শেয়ারদর কিছুদিন ধরে লাফিয়ে বাড়ছে।
শুধু এবি ব্যাংক বা ডাচ্-বাংলা নয়, এমন ১১টি ব্যাংক থেকে বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড গেইন থেকে বঞ্চিত হলেও বর্তমান বাজারে সেসব শেয়ারে উল্লম্ফন থেমে নেই। তবে অনেকে চেষ্টা করছেন এসব কোম্পানির শেয়ার থেকে ক্যাপিটাল গেইন করতে। কিন্তু এক্ষেত্রে বুঝেশুনে বিনিয়োগ করতে না পারলে ক্যাপিটাল গেইনের বিপরীতে লোকসানের শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ২০১০ সালের শেয়ারবাজারে যখন বড় ধরনের ধস নামে, সে সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। এর মধ্যে ব্যাংক খাতের বিনিয়োগকারীদের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। কারণ সে সময় ব্যাংক খাতের কোম্পানির শেয়ারে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা দিয়েছিল। এ উল্লম্ফন দেখে বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করে। পরবর্তী ধস নেমে এলে ব্যাংক খাতের বিনিয়োগকারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধসের পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতের শেয়ার ফেসভ্যালুর নিচে বা তার আশপাশে ওঠানামা করেছিল। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো নামে বেনামে ঋণ দেওয়ায় খেলাপির পরিমাণ বাড়তে থাকে। এতে মুনাফার পরিমাণ করতে থাকে। অনেক ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়। পরবর্তী সময়েত ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করলেও খেলাপির বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে আশানুরূপ লভ্যাংশ দিতে পারছে না। আবার কেউ কেউ তাদের মূলধনের ঘাটতি মেটাতে বোনাস লভ্যাংশ দিচ্ছে। তাছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান নগদ লভ্যাংশ দিচ্ছে, তাদের বেশ কিছুর প্রকৃত মুনাফার হার (ইল্ড) স্থায়ী আমানতের চেয়ে অনেক কম। এতে এসব কোম্পানি থেকে ডিভিডেন্ড গেইন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। তবে বর্তমান সময়ে বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে ব্যাংক খাতের শেয়ারদর বাড়ছে। এর ধারাবাহিকতায় লভ্যাংশ গেইন বঞ্চিত ১১টির ব্যাংকের শেয়ারদরেও উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। তবে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে বুঝেশুনে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন তারা।
যেসব ব্যাংকের ডিভিডেন্ড গেইন থেকে
বঞ্চিত বিনিয়োগকারীরা হয়েছে সেগুলোর
মধ্যে আরও রয়েছে ব্যাংক এশিয়া, আইএফআইসি, ন্যাশনাল ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক। তবে
এসব কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে বর্তমান বাজারে বেশ উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর আগের চেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করছে। তাছাড়া তাদের শেয়ারদর হাতের নাগালেÑএসব কারণে ব্যাংক খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। এটা ভালো লক্ষণ।’
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বাজারে ভালো শেয়ারের খুব অভাব। এর মধ্যে বেশিরভাগ ব্যাংকের ইল্ড (প্রকৃত মুনাফার হার) ভালো। তাছাড়া পিই রেশিও সহায়ক অবস্থানে। এসব বিবেচনায় ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ছে। এতে এগুলোর দর বাড়ছে।’ তবে বুঝেশুনে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন তিনি।