প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহী অঞ্চলে প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খামারিদের লোকসান দুই টাকা করে। মাংস উৎপাদনেও বাড়ছে লোকসানের পাল্লা। ক্রমাগত লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে এ অঞ্চলের অন্তত ২০ হাজার মুরগির খামার। গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মুরগির খামারিরা।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারি উদ্যোগে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করে খামারি পর্যায়ে প্রতিটি ডিমে ৬০ থেকে ৮০ পয়সা এবং প্রতি কেজি মুরগিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা নির্ধারণের দাবি জানানো হয়। একেই সঙ্গে স্বল্প মূল্যে ভ্যাকসিন, মেডিসিন ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত, পোলট্রি খামারগুলোয় স্থাপিত বৈদ্যুতিক মিটারগুলোকে কৃষিভিত্তিক মিটারে রূপান্তর, স্বল্প সুদে ও সহজ পদ্ধতিতে জামানতবিহীন ঋণ প্রদান এবং ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনর্বাসনে প্রণোদনার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি আহ্বায়ক হাসিবুল আলম লিখিত বক্তব্যে বলেন, এরই মধ্যে দেশের রাজশাহী অঞ্চলে বিভিন্নভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন অনেক খামারি। লোকসানের বোঝা টানতে না পেরে এরই মধ্যে রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ অঞ্চলে চলতি বছরে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় অর্ধেক পোলট্রি খামার।
তিনি বলেন, একজন খামারির জমির খাজনা, এক দিন বয়সের বাচ্চার মূল্য, খাদ্য ও মেডিসিন খরচ, কর্মচারীর বেতন এবং বিভিন্ন রোগবালাইয়ে মুরগির মৃতের হার বিবেচনাপূর্বক বর্তমানে সাদা ডিম উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৯ টাকা ৫০ পয়সা এবং লাল ডিমের ক্ষেত্রে খরচ পড়ছে ১০ টাকা।
একজন খামারি বর্তমানে সাদা ডিমের মূল্য পাচ্ছেন সাত টাকা ৬০ পয়সা ও লাল ডিমে পাচ্ছেন আট টাকা। এতে প্রতিদিন সাদা ডিমে লোকসান গুনতে হচ্ছে এক টাকা ৯০ পয়সা এবং লাল ডিমে ২ টাকা। সেই হিসাবে পাঁচ হাজার ডিম উৎপাদনকারী খামারির প্রতিদিন লোকসান ১০ হাজার টাকা। প্রতি মাসে লোকসানের পরিমাণ প্রায় তিন লাখ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারদর ও খাদ্য খরচসহ অন্যান্য খরচাদির হিসাব করে প্রতি কেজি সোনালির উৎপাদন খরচ পড়ছে ২২০ থেকে ২০০ টাকা, হাইব্রিড সোনালির ২০০ থেকে ২১০ টাকা ও ব্রয়লারের ক্ষেত্রে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। বেশিরভাগ সময় খামারিরা তাদের কাক্সিক্ষত মূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বর্তমানে দফায় দফায় মেডিসিনসহ প্রয়োজনীয় সব পণ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে মাংসজাত মুরগির ডিম উৎপাদন অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। পোলট্রির খাবার ও মেডিসিনের মূল্যবৃদ্ধি হলেও ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি ডিমের দাম বাড়েনি। ২০০৮ সালে ৫০ কেজি ফিডের দাম ছিল এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা। বর্তমানে সেই ফিডের দাম তিন হাজার টাকা। একই সঙ্গে মেডিসিন, টিকা, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতনসহ প্রয়াজনীয় সব সামগ্রীর খরচ দ্বিগুণ হয়েছে।
একই কারণে মাংসের মুরগি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি বিরাজমান। অথচ দেশে পোলট্রি সেক্টরের উন্নয়ন সরকারি সহায়তা দানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থাকলেও মূলত এগুলোর কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। এতে কোনোভাবেই ভোগান্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না খামারিরা। তাদের দাবি, খাদ্য ও মেডিসিন ছাড়া সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রতিদিন অস্বাভাবিক হারে ওঠা-নামা করছে এক দিন বয়সী বাচ্চার দাম। এক দিন বয়সী বাচ্চার দাম কখনও ১৫ টাকা, কোনো কারণ ছাড়াই রাতের ব্যবধানে সেই বাচ্চা কখনও ৩০ টাকা, কখনও-বা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট নজর নেই বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারি প্রতিষ্ঠনগুলোর দিকে। এতে করে আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছেন খামারিরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী পোলট্রি ফার্মার ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মানিকুজ্জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল আলম ও রাজশাহী পোলট্রি ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন প্রমুখ।