Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 12:36 pm

ডিমবোঝাই ট্রাক ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় ২৫ হাজার ডিমবোঝাই পিকআপভ্যান ডাকাতির সময় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ডাকাতদলের সদস্যরা দিনের বেলায় বিভিন্ন গার্মেন্টে চাকরি করে আর রাতের বেলা পণ্যবাহী ট্রাক বা পিকআপ ভ্যানে ডাকাতি করে। তারা যাত্রীবাহী বাস দিয়ে টার্গেট ট্রাক-পিকআপ আটকে এক বছরে অন্তত ছয়-সাতবার ডাকাতি করত।

শুক্রবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১-এর যৌথ অভিযানে রূপগঞ্জ ও বন্দর এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেনÑমুসা আলী (৪০), নাঈম মিয়া (২৪), শামিম (৩৫), রনি (২৬), আবু সুফিয়ান (২০), মামুন (২৪)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি চাপাতি, একটি চাইনিজ কুড়াল, একটি ছুরি ও ডাকাতির কাজে ব্যবহƒত একটি বাস জব্দ করা হয়। উদ্ধার করা হয় ডাকাতির শিকার দুজনসহ ডিমবাহী পিকআপ ভ্যান।

গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রূপগঞ্জের ভূলতা এলাকায় র‌্যাবের টহল চলাকালে একটি ডিম বোঝাই পিকআপভ্যানের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে গতিরোধ করা হয়। এ সময় পিকআপভ্যান থেকে দুজনকে পালানোর সময় আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথাবার্তায় অসংলগ্ন আচরণ প্রকাশ পাওয়ায় তাদের তল্লাশি করে একটি চাপাতি ও একটি চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করা হয়।

তারা দুজনই সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের সক্রিয় সদস্য বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা যুবকল্যাণ এক্সপ্রেসের একটি বাসের মাধ্যমে ডিমের পিকআপ ভ্যানের পিছু নেয়। একপর্যায়ে রাস্তা আটকে চালক ও তার সহকারীকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভ্যানটি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

চালক ও তার সহকারীকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে মারধর করে বাসে উঠিয়ে নেয়। এরপর ডাকাতদলের সরদার মুসা ও তার প্রধান সহকারী নাঈম ভ্যানটি নিয়ে গাউছিয়া-মদনপুরমুখী রাস্তায় নিয়ে যায়। ডাকাতদলের বাকি সদস্যরা ভ্যানের চালক ও হেলপারকে বাসে করে মদনপুরের দিকে নিয়ে যায়।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, পরে ডাকাতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে যুবকল্যাণ এক্সপ্রেসের বাসটি আটক করা হয়। এ সময় বাসটি থেকে ডাকাতদলের আরও চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে উদ্ধার করা হয় ভ্যানের চালক ও সহকারীকে। এ সময় বাসের জানালা ভেঙে আরও চার-পাঁচ ডাকাত পালিয়ে যায়।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ১০-১২ জনের এ গ্রুপটি কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত ডাকাতি করে আসছে। তারা পেশায় কেউ গার্মেন্ট কর্মী, ড্রাইভার, হেলপার, আবার কেউ রাজমিস্ত্রি ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও রাতে তারা ডাকাতি করে।

চক্রটি মূলত তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি করে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, মুসার নির্দেশে প্রথম গ্রুপটি বিভিন্ন গার্মেন্টের পণ্যবাহী ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। দ্বিতীয় দলটি বাস নিয়ে মহাসড়কে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে ডাকাতিতে অংশ নেয়। তৃতীয় দলটি ডাকাতি করা পণ্য বিক্রি করার জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায়। এছাড়া পণ্যবাহী গাড়ির রং পাল্টে সুবিধাজনক স্থানে বিক্রি করে দেয়, অথবা গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মুসা ১০-১২ বছর ধরে মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছে। মুসাসহ দলের সবার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়ে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আবার ডাকাতিতে জড়িত হয়।