২০১৩ সালে পুঁজিবাজার ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হলো। ২০১৮ সালে এসে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনের শেনঝেন ও সাংহাই কনসোর্টিয়ামকে পাওয়া গেল। আর ডিমিউচুয়ালাইজেশন বাজারের প্রচুর পরিবর্তন এনেছে। এখানে মূলত ম্যানেজমেন্টকে পৃথক করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ব্রোকারদের কারসাজি অনেকটাই কমে গেছে। আর এটাই ছিল ডিমিউচুয়ালাইজেশনের প্রথম উদ্দেশ্য। তাছাড়া কৌশলগত অংশীদার দেশের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে। যদিও কৌশলগত অংশীদার পেতে একটু সময় লেগেছে কিন্তু যাদের আমরা পেয়েছি তারা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। কাজেই এটি অবশ্যই পুঁজিবাজারের জন্য ভালো খবর। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. ফোরকান উদ্দিন, এফসিএ এবং সুপার স্টার গ্রুপের পরিচালক মো. শফীকুল আলম, এফসিএ। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
মো. ফোরকান উদ্দিন বলেন, ২০১৩ সালে পুঁজিবাজার ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হলো এবং ২০১৮ সালে এসে আমরা কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনের শেনঝেন ও সাংহাই কনসোর্টিয়ামকে পেলাম। আর ডিমিউচুয়ালাইজেশন বাজারের প্রচুর পরিবর্তন এনেছে। এখানে মূলত ম্যানেজমেন্টকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে যা হয়েছে, আগে আমরা শুনতাম, ব্রোকাররা প্রচুর পরিমাণে কারসাজি করে সে জায়গায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছে। আর এটাই ছিল ডিমিউচুয়ালাইজেশনের প্রথম উদ্দেশ্য। আর ডিমিউচুয়ালাইজেশন যখন হয়েছে তখনই বলা হয়েছে যে, ২৫ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত অংশীদারে আনতে হবে। তাছাড়া কৌশলগত অংশীদার দেশের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে। যদিও কৌশলগত অংশীদার পেতে একটু সময় লেগেছে কিন্তু যাকে আমরা পেয়েছি তারা পৃথিবীর দ্বিতীয়, অনেকে প্রথম অর্থনীতির দেশও বলে। কাজেই এটি অবশ্যই পুঁজিবাজারের জন্য ভালো খবর এর সুফল বাজারে আনবে বলেই মনে করি।
মো. শফীকুল আলম বলেন, পুঁজিবাজার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত নিয়মনীতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। আগে খোলাবাজারে কাগজে-কলমে শেয়ার কেনাবেচা হতো। তখন খোলাবাজারে কেউ কল করত এবং অনেকে তা গ্রহণ করত। আর সে আগ্রহ থেকেই ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে প্রচুর মানুষ পুঁজিবাজারে আগ্রহী হয়। ১৯৯৬ সালে বাজারে একটি ধস নামে। ওই ধাক্কা কাটিয়ে পরবর্তীতে আবারও বাজারে ২০০৫-০৬ থেকে শুরু করে ২০১০ সালে পর্যন্ত মানুষের ব্যাপক সম্পৃক্ততা ঘটে এবং আবারও বাজারে ধস নামে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে মানুষের উপস্থিতি ছিল প্রচুর পরিমাণে। তবে ২০১০ সালের পর পুঁজিবাজার অনেক সক্রিয় হয়েছে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাজার এক রকম ছিল এবং ’৯৬-এর পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাজার আরেক রকম ছিল। কিন্তু ২০১০ সালের পর থেকে পুঁজিবাজারে চাহিদাই ছিল যে, বাজার আসলে আরও নিয়মানুয়ায়ী হতে হবে, আরও বেশি পদ্ধতিগত হতে হবে এবং নীতিগুলো স্থিতিশীল হতে হবে। কারণ তখন নীতিগুলো দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছিল এবং মার্জিন লোনের ইস্যুটি তো প্রতি দুই মাস পরপরই পরিবর্তন হচ্ছিল। আর এটাই ছিল ২০১০ সালের বাজার ধসের মূল কারণ। ফলে ২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাজারে প্রচুর নিয়মনীতি সংশোধন করেছে এবং তা কার্যকর হয়েছে। হয়তো কিছু কিছু কার্যকর হয়নি। কারণ স্বাভাবিকভাবেই যে কোনো নিয়ম যখন শুরু হয় তখন যারা সুযোগ-সন্ধানী তারা ওই নিয়মটির ব্যতিক্রম ঘটাতে চায়। তাছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে বা সারা পৃথিবীতে যে আইন আছে তাতে অন্য কোনো নতুন আইনের প্রয়োজন নেই যদি আইনগুলোর সঠিক প্রয়োগ থাকে। কিন্তু বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে এ আইনগুলোর সঠিক প্রয়োগ হয় না। এ ক্ষেত্রে আমরা ঢালাওভাবে সবার সমালোচনা করি তা ঠিক নয়। আসলে আগে আমাদের নিজেদের পরিবর্তনের মানসিকতা আনতে হবে।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম