ডিমিউচুয়ালাইজেশনের মূল লক্ষ্য অর্জিত হয়নি

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর দেশের স্টক এক্সচেঞ্জগুলো আরও সক্রিয় ও গতিশীল হয়ে নতুন ভালো কোম্পানি আনতে পারবে বলে সবার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় পাঁচ-ছয় বছর আগে ডিমিউচুয়ালাইজেশন হলেও বাজারে নতুন ভালো কোম্পানি আনার ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না। প্রশ্ন হচ্ছে, ডিমিউচুয়ালাইজেশন কি আসলেই হয়েছে? ডিমিউচুয়ালাইজেশন করতে হলে প্রথমেই ট্রেডারদের মালিকদের থেকে আলাদা করতে হবে। কিন্তু বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, যারা ট্রেডার তারাই মালিক। মানে ব্রোকার হাউজের যারা মালিক তারাই এখনও ট্রেডিং করছেন। ফলে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের যেটি মূল লক্ষ্য সেটাই এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বিএসইসির অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এবং আইসিএবির সহসভাপতি মাহমুদ হোসেন, এফসিএ।

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ১৫-২০ বছর ধরে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো। বিভিন্ন খাতে আমরা অনেক উন্নতি করেছি। যদিও সম্প্রতি দু-একটি খাতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে, তারপরও সব মিলিয়ে ভালো। তবে আমাদের স্টক এক্সচেঞ্জের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান তৈরি ও অর্থনীতির আরও প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ। গত সাত-আট বছরে বেসরকারি খাতে তেমন কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি। যদিও সরকারি খাতে বেশ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, কিন্তু বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ অনেক বছর ধরে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ২২-২৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। কাজেই আমরা যদি বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চাই তাহলে এ খাতে বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন। কিন্তু ভূমির অভাব, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, সুশাসনের অভাবসহ আরও বিভিন্ন কারণে এ ক্ষেত্রে আমরা তেমন কোনো অগ্রগতি সাধিত করতে পারছি না। লক্ষ করলে দেখবেন, গত কয়েক বছরে ৯৭ শতাংশের মতো বিনিয়োগ এসেছে ব্যাংক খাত থেকে এবং মাত্র তিন শতাংশের মতো বিনিয়োগ এসেছে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে। ফলে এই বিনিয়োগকে যদি আমরা ত্বরান্বিত করতে চাই তাহলে অবশ্যই স্টক এক্সচেঞ্জকে সক্রিয় এবং আরও আকর্ষণীয় করতে হবে। আমরা আশা করেছিলাম যদি ডিমিউচুয়ালাইজেশন হয় তাহলে হয়তো দেশের স্টক এক্সচেঞ্জগুলো আরও সক্রিয়, ডায়নামিক ও গতিশীল হয়ে নতুন ভালো কোম্পানি আনতে পারবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় পাঁচ-ছয় বছর ধরে ডিমিউচুয়ালাইজেশন হয়েছে, কিন্তু বাজারে নতুন ভালো কোম্পানি আনার ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। প্রশ্ন হচ্ছে, এটি আসলেই ডিমিউচুয়ালাইজেশন হয়েছে? ডিমিউচুয়ালাইজেশন করতে হলে প্রথমেই ট্রেডারদের মালিকদের কাছ থেকে আলাদা করতে হবে। কিন্তু বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, যারা ট্রেডার তারাই মালিক। মানে ব্রোকার হাউজের যারা মালিক তারাই এখন ট্রেডিং করছেন, নতুন কোনো লোক আসেনি।

মাহমুদ হোসেন বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশন যে উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছিল সেই উদ্দেশ্য কিন্তু অর্জিত হয়নি। কারণ আমরা সেভাবে এর ফলাফল লাভ করতে পারিনি। আমরা জানি, পৃথিবীর দুটি বড় স্টক এক্সচেঞ্জ চায়নার সাংহাই ও শেনঝেন আমাদের বাজারে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহী হয়েছে। এর মধ্যে সাংহাই ২২ টাকা করে প্রস্তাব দিয়েছে এবং তাদের অভিজ্ঞতাও আছে বিদেশে মার্কেটিং করার। তাছাড়া আমরা যদি বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে চাই তাহলে তাদের নামই আলাদা একটি আস্থা বহন করে নিয়ে আসবে বাজারে। অন্যদিকে আমরা ভারতীয় যে কোম্পানির কথা শুনেছি তাদের এ রকম কোনো অভিজ্ঞতাও নেই।

 

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০