ডিমের দাম কমছেই না বাড়ছে রসুন ও আদার দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরবরাহ কম, মুরগির খাবারের দামবৃদ্ধি, বৃষ্টি ও বাড়তি পরিবহন ভাড়ার অজুহাতে বেড়ে যাওয়া ডিমের দাম এখনও কমেনি। বাজারে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। অন্যদিকে পাড়া-মহল্লার দোকানে একই ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। এদিকে চলতি সপ্তাহে গত সপ্তাহের তুলনায় নতুন করে বেড়েছে আদা ও রসুনের দাম।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনও চড়া ডিমের দাম। সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকা লাল ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়। আর পাড়া-মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। একইভাবে দেশি ডিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা ডজন। প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২০০ টাকা। এছাড়া, কোয়েলের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়।

মহাখালী কাঁচাবাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী নাজমুল হক। তিনি বলেন, বাজারে এমন কিছু নেই যার দাম বাড়তি যাচ্ছে না। দামের কারণে যারা মাছ, মাংস কিনে খেতে পারছেন না তারা অন্তত সবজি, ডিম, ডাল খেয়ে বেঁচে আছেন। সেই ডিমের দামও এখন বাড়তি।

তিনি বলেন, বাজারে এক হালি ডিম কিনতে হচ্ছে ৪৮ টাকায়। আর পাড়ার দোকানে দাম পড়ে যাচ্ছে ৫০ টাকা। অর্থাৎ একটি ডিম ১২ টাকা ৫ পয়সায় কিনতে হচ্ছে। দোকানদারদের জিজ্ঞেস করলে বলে, মালের দাম বাড়তি যাচ্ছে।

বাজারের চেয়ে পাড়া-মহল্লার দোকানে ডিমের দাম বেশি কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে রামপুরা এলাকার মুদি দোকানি মোজাম্মেল হক বলেন, বড় দোকানে প্রচুর বিক্রি হয়। কিন্তু আমরা বাজার থেকে অল্পসংখ্যক ডিম এনে দোকানে বিক্রি করি। তাই ১৫০ টাকা ডজন বিক্রি করছি ডিম। এটাই বাজারে গেলে ক্রেতারা ১৪৫ টাকায় পাচ্ছেন।

রাজধানীর রামপুরা বাজারের ডিম ব্যবসায়ী রুস্তম আলী বলেন, লাল ডিমের পাশাপাশি দেশি মুরগি, হাঁস ও কোয়েল পাখির ডিম বিক্রি করছিলেন। তিনি বলেন, বাজারে হাঁসের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। আর দেশি মুরগির ডিম ২০০ টাকা ডজন। কোয়েলের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা ডজন। এছাড়া দেশি হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়।

এদিকে চলতি সপ্তাহে গত সপ্তাহের তুলনায় নতুন করে বেড়েছে আদা ও রসুনের দাম। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে দেশি আদা ও রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৪ শতাংশের বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকার মতো। গত সপ্তাহের ৮০ টাকা কেজি দরের দেশি রসুন এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। আর গত সপ্তাহে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশি আদা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২১৫ টাকা কেজি দরে।

ব্যবসায়ীরা জানান, দেশি আদার পাশাপাশি আমদানি করা আদার দামও বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকার মতো। তারা গত সপ্তাহে ১৫০ টাকা কেজি দরে আমদানি করা আদা বিক্রি করলেও চলতি সপ্তাহে প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ১৮০ টাকা দরে। এদিকে ব্যবসায়ীরা আমদানি করা হলুদ বিক্রি করছেন গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৪০ টাকা বেশি দরে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে আমদানি করা হলুদের দাম ছিল ২০০ টাকা কেজি, চলতি সপ্তাহে সেই একই হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি দরে।

এ প্রসঙ্গে কারওয়ানবাজার এলাকার ব্যবসায়ী সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘আমদানি করা আদা, হলুদ ও রসুন আগের তুলনায় একটু কম আসছে। এ কারণে এই পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে।’

দাম বাড়ার তালিকায় থাকা ডিম  হালিতে বেড়েছে ৩ টাকার বেশি। আর প্রতি ডজনে বেড়েছে প্রায় ১২ টাকার মতো। গত সপ্তাহে ৪৭ টাকা হালি ফার্মের মুরগির ডিম এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা হালি।  বাজার ঘুরে দেখা যায়, মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩৫ টাকা।

ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ টাকা। এছাড়া লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা এবং সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ টাকা, আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা দরে।

চালের বাজারে এখনও অস্থিরতা বিরাজ করছে। খুচরা বাজারে ব্রি-২৮  চালের কেজি ৬০ টাকা, মিনিকেট ৭০-৭৫ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৫৫ টাকা, স্বর্ণা ৫০ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মোটা মসুর ডালের কেজি ১১০ টাকা, চিকন মসুর ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। এছাড়া পেঁয়াজের কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে খোলা আটা (সাদা) বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে এই একই আটার দাম ছিল ৫২ টাকা কেজি। অর্থাৎ কেজিতে বেড়েছে ৩ টাকার মতো। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে এই আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ শতাংশের বেশি। এছাড়া ময়দার (প্যাকেট) দাম কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এই প্যাকেট ময়দার দাম ছিল ৬৩ টাকা কেজি।

বাজারে ৬০ টাকা কেজির নিচে পেঁপে আর কাঁচকলা ছাড়া কোনো সবজিই মিলছে না। যদিও বাজারে সবজির সরবরাহ রয়েছে পর্যাপ্ত। বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, আর চিকন বেগুন ৭০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা। প্রতি আঁটি লাল শাক ২৫ টাকা, ডাটা শাক ২৫ টাকা, পুঁই শাক বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৬০-৭০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শাকসবজির মতো মাছের দামও বাড়তি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০ টাকা, রুই ২৫০ টাকা, পাঙাশ ১৬০ টাকা, সিলভার কার্প ১৪০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে ৫০০-৭৫০ টাকা এবং চিংড়ি মাছ ৬০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর গোপীবাগ বাজারে আসা রুহুল আমিন বলেন, ‘বাজারে সব কিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু আয় বাড়েনি, এ কারণে বাধ্য হয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছি।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০