বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে আজ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ডিম মেলার আয়োজন করা হয়েছে এবং সেখানে বাজারমূল্যের অর্ধেকেরও কমে এটি বিক্রি করা হচ্ছে। এমন উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। দেশের মানুষের একটি বড় অংশের আমিষের চাহিদা মেটে ডিমের মাধ্যমে। দাম বাড়লেও সাধারণের ক্রয়সীমার একেবারে বাইরে এটি চলে গেছে সেটা বোধহয় বলা যাবে না। অতীতের চেয়ে হাঁস-মুরগির ডিম উৎপাদন অনেক বেড়েছে দেশে। তবে উৎপাদন আরও বাড়িয়ে ডিমের দাম কমিয়ে আনা ও কম রাখা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে অর্থাভাবে যারা বছরে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ডিম খেতে পারেন না, এ সংকট থেকে তাদের মুক্তি মিলবে।
১৯৯৬ সাল থেকে বিশ্বের ৬০টি দেশে ‘ডিম দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। এবারের ডিম দিবসে রাজধানীতে আয়োজিত মেলায় মাত্র তিন টাকা পিস হিসেবে ডিম বিক্রির উদ্যোগ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর প্রচার হয়েছে অনেক। আশা করা যাচ্ছে, এ ধরনের উদ্যোগে মানুষের মধ্যে ডিম খাওয়ার প্রবণতা বাড়বে। পুষ্টিবিদরা বলেন, ডিমে শর্করা বাদে অন্য সব পুষ্টি উপাদানই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রয়েছে। এর সাদা অংশটি সরল আমিষ অ্যালবুমিন ও কুসুমে রয়েছে ওমেগা-৩ আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড যা স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ উপাদানের পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে। সহজপাচ্য বলে অসুস্থ ব্যক্তি, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি বেশি উপযোগী। সে সঙ্গে ডিম সুস্বাদু খাবার। অতীতে দিনে একটির বেশি ডিম গ্রহণ নিরুৎসাহিত করা হলেও বর্তমানে দিনে তিনটি ডিম খাওয়ার কথাও বলা হচ্ছে কিছু গবেষণায়। তবে রক্তে মন্দ কোলেস্টেরল বেশি এমন ব্যক্তিকে ডিমের কুসুম খেতে এখনও বারণ করে থাকেন চিকিৎসকরা।
সেদ্ধ, পোচ, ভাজি এ তিন উপায়েই মূলত ডিম খাওয়া হয়ে থাকে। তরকারিতে মিশিয়েও খাওয়া যায়। আগে শুধু শীতকালে ও লঞ্চ-ট্রেনে সেদ্ধ ডিম পাওয়া গেলেও এখন শহরে বলতে গেলে সারা বছরই এটি বিক্রি হয়। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এ খাবারটি খেলে পেটও ভরা থাকে অনেকক্ষণ। শ্রমজীবীরা সাধারণত সকালের নাস্তা ও দিনের অন্য খাবারে ডিম কিংবা ডিম থেকে তৈরি খাবার গ্রহণ করে থাকেন। অন্যতম প্রধান উপকরণ হওয়ায় ডিমের ওপর বেকারিশিল্প নির্ভরশীল। বেকারিপণ্য যেমন রুটি, বিস্কুট, কেক প্রভৃতি উৎপাদনে ডিমের চাহিদা রয়েছে সারা বছরই। ছোট বেকারিগুলো পরিবহনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ডিমও ব্যবহার করে তাদের ব্যয় কমাতে।
দেশ এখন ব্রয়লার মুরগিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা চলে। সেজন্য মুরগির মাংসের দাম রয়েছে সাধারণের নাগালে। একই সঙ্গে ডিম উৎপাদনে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দৈনন্দিন আমিষের চাহিদা পূরণে এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। মাংসের চেয়ে সস্তা হওয়ায় এটি শহর-গ্রাম সবখানে জনপ্রিয়। অর্গানিক ডিমের চাহিদাও বাড়ছে। বৃহৎ করপোরেট প্রতিষ্ঠান পোলট্রি ও ডিম উৎপাদনে বিনিয়োগ করছে। আমরা আশা করব, পুষ্টিকর এ খাদ্যটির উৎপাদন যথাসম্ভব প্রাকৃতিক উপায়ে করা হবে। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর উপায় অবলম্বনের যে অভিযোগ অনেক সময় পাওয়া যায়, সেটি মনিটরিং করতে হবে জোরালোভাবে।