শেয়ার বিজ ডেস্ক: ডিসিদের প্রকল্পের তদারকির দায়িত্ব দিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল না করলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশের প্রকৌশলীরা। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশে (আইইবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
প্রকৌশলী নেতারা বলেন, প্রকৌশলীরা উন্নয়নমূলক ও সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে সমাজ বিনির্মাণে অবদান রাখছেন। এককথায় প্রকৌশলীরা উন্নয়নের প্রথম কাতারের সৈনিক। এর পরও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রকৌশলীদের কাজের পরিবেশ বিনষ্ট করার উদ্যোগ দুঃখজনক।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, গত ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি ডিসি সম্মেলনে ডিসিদের দিয়ে প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করার বিষয়ে অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করা হয়। ওই সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী সে দাবি নাকচ করে দেন। এর পরও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ১৮ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে ডিসিদের এডিবিভুক্ত শতভাগ প্রকল্প পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের দায়িত্ব অর্পণ করে।
তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ের প্রকল্প নির্বাহী প্রকৌশলীদের নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হয়। আর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলীরা সরাসরি এসব প্রকল্পের কার্যক্রম মূল্যায়ন ও তদারকি করে থাকেন। এ অবস্থায় ডিসিদের প্রকৌশলীদের ওপর খবরদারির দায়িত্ব দেয়ায় দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিলম্বিত হচ্ছে। অবিলম্বে এ প্রজ্ঞাপন বাতিল না করলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন প্রকৌশলীরা। সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হয়ে আমরা আন্দোলনে যেতে চাই না।
আইইবি’র প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আজ আইইবি’র ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমরা নতুন প্রকৌশলীদের সরকারি চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহিত করছি। এসব প্রকৌশলী যাতে সহজে ঋণ সুবিধা পান সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রকৌশলীদের সনদ জমা রেখে ঋণ সুবিধা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। এটা করা সম্ভব হলে নতুন প্রকৌশলীরা চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করবে। তাহলে দেশের উন্নতি হবে, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
প্রকৌশলীদের একমাত্র জাতীয় পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। দিবসটিকে আইইবি ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ হিসেবে পালন করে আসছে। গত দুই বছর কভিডের কারণে এ দিবস ভার্চুয়ালি পালন করা হলেও এবার আগের বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় দিবসটি ঘিরে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আইইবির প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. নূরুল হুদা বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ প্রকৌশলীদের একমাত্র জাতীয় পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান। ‘উন্নত জগৎ গঠন করুন’Ñএ সুমহান আদর্শ সামনে রেখে জাতীয় উন্নয়ন তথা দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৪৮ সালের ৭ মে ইনস্টিটিউশন যাত্রা শুরু করে।
তিনি বলেন, প্রকৌশল শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষসাধন, বিশ্বের নিত্যনতুন আধুনিক
প্রযুক্তির সঙ্গে প্রকৌশলীদের পরিচয় করে দেয়া, বিদেশি প্রযুক্তিকে দেশোপযোগী করে প্রয়োগ, বিভিন্ন কারিগরি ইস্যু, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকারকে পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নে সহযোগিতা করা এবং প্রকৌশলীদের মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশসাধনে ইনস্টিটিউশন ৭৪ বছর ধরে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাৎ হোসেন কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’র অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে আজকের (গতকাল) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। আজ সকাল ১০টায় আইইবি সদর দপ্তর, রমনা, ঢাকা প্রাঙ্গণে জাতীয় ও আইইবি’র পতাকা উত্তোলন, শপথ গ্রহণ ও র্যালি হবে। একই দিন দেশব্যাপী আইইবি’র ১৮টি কেন্দ্র, ৩৩টি উপকেন্দ্র এবং ১৩টি ওভারসিজ চ্যাপ্টারেও অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হবে। তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ডে উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। এছাড়া আইইবির বিভিন্ন প্রকৌশল বিভাগ, কেন্দ্র/উপকেন্দ্র এবং ওভারসিজ চ্যাপ্টারগুলোয় মাসব্যাপী ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’র কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আইইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন, প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, প্রকৌশলী নুরুজ্জামান, প্রকৌশলী এসএম মনজুরুল হক মঞ্জু, সহকারী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. রনক আহসান, প্রকৌশলী শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন, প্রকৌশলী আবুল কালাম হাজারী, প্রকৌশলী প্রতীক কুমার ঘোষ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।