Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:25 pm

ডিসিরা এনবিআরের কাজে অনধিকার চর্চা করতে চায়!

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্থানীয়ভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নেতৃত্বে কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। এ প্রস্তাবকে অবৈধ, এখতিয়ার-বহির্ভূত এবং অর্থহীন দাবি করে ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন। এর মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা করছে তারা। এর মাধ্যমে এনবিআরে অস্থিরতা সৃষ্টির অপতৎপরতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

গতকাল বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সেলিম আফজাল ও মো. নূরুজ্জামান খান এবং বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মো. আমিনুর রহমান ও মহাসচিব সৈয়দ মুশফিকুর রহমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৪ জুলাই সচিবালয়ে ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন অধিবেশন শেষে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান জানান, ‘স্থানীয়ভাবে সরকারের রাজস্ব আহরণ বাড়াতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ডিসি-ইউএনওদের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) কমিটি চেয়েছেন। ডিসিদের এ প্রস্তাবকে সরকার ভালো প্রস্তাব হিসেবেই দেখছে। তাহলে তারা আয়কর বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।’ উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজস্ব আদায় বাড়াতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে এনবিআরের। জেলা প্রশাসকদের প্রস্তাবের সঙ্গে এনবিআরের প্রস্তাবের সমন্বয় প্রয়োজন হবে। তখন হয়তো বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করা যাবে।’

ডিসি সম্মেলনে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের রাজস্ব-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্পৃক্ত হতে চাওয়ার দাবির প্রতি বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) ও বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। উভয় সংগঠন এ ধরনের অযৌক্তিক, এখতিয়ার-বহির্ভূত এবং অর্থহীন দাবির বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সরকার পরিচালনা ও জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে সরকার ২৮টি ক্যাডার সৃষ্টি করেছে। প্রত্যেকটি ক্যাডারের নিজস্ব কর্মের পরিধি ও প্রকৃতি সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ এবং এ-সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী কার্যক্রম পরিচালিত হয় বিসিএস (ট্যাক্সেশন) ও বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) ক্যাডারের মাধ্যমে। এ দুটি ক্যাডার কর্মকর্তারা এনবিআরের নীতিনির্ধারণী নির্দেশনা অনুসরণ করে নিজস্ব আইনের আওতায় স্ব-স্ব অধিক্ষেত্র থেকে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করে থাকে। আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪, মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ ও কাস্টমস আইন-১৯৬৯ অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা এ দুটি ক্যাডার কর্মকর্তাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এনবিআরের দাফতরিক নিয়ন্ত্রণ উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে এবং এর নিজস্ব দাফতরিক কাঠামো ও জনবল দিয়ে সরকারের প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংস্থানে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘ডিসি সম্মেলনে ডিসি-ইউএনওরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে রাজস্ব আদায় পরিবীক্ষণ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রস্তাব পেশ করেছেন। এ ধরনের প্রস্তাব কেবল অন্যান্য পেশাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আইনের আওতায় পরিচালিত কার্যক্রমের ওপর অবৈধ ও এখতিয়ার-বহির্ভূত হস্তক্ষেপই নয়; বরং এর মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমান সরকার যখন দেশের আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনার প্রচেষ্টায় তৎপর, সে মুহূর্তে দুরভিসন্ধিমূলক এই প্রস্তাব পেশ করার মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত দেশের ৮৮ ভাগ রাজস্ব জোগানকারী প্রতিষ্ঠান এনবিআরে অস্থিরতা সৃষ্টির এ অপতৎপরতার মূল উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পেশাদারিত্বের বিপরীতে অবস্থান গ্রহণকারী প্রশাসন ক্যাডার তাদের ওপর ন্যস্ত ভূমি রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে কতটা পেশাদারিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে তা বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং এর বিপরীতে রাজস্ব আহরণে যে অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে, সে বিষয়ে মনোনিবেশ না করে আরও নতুন দায়িত্ব পাওয়ার দাবি করাটা নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্যমূলক। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংস্থানকারী দুটি ক্যাডার কর্মকর্তাদের মনোবল বিনষ্টকারী এ ধরনের কর্মকাণ্ড সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে বলে দুটি অ্যাসোসিয়েশন মনে করে। দেশের জন্য অকল্যাণকর এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিরত রাখার জন্য সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এনবিআরের কর্মের স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্য, ঐতিহ্য ও আইনি বাধ্যবাধকতা বিবেচনায় এনে এ ধরনের এখতিয়ার-বহির্ভূত প্রস্তাবকে আমলে না নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

আরও বলা হয়, মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা রাজস্ব আদায়ে বিদ্যমান আয়কর ও ভ্যাট আইনে যেসব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে (উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহ করে তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ট্রেজারিতে জমা দিয়ে কর অফিসকে অবহিত করা), সেগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে পরিপালন করার বিষয়ে মনোযোগী হলে সার্বিকভাবে দেশ উপকৃত হবে। মোট রাজস্বের ৮৮ ভাগ আসে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে, যা এনবিআরের মাধ্যমে আহরিত হয়। এ দুটি ক্যাডার কর্মকর্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং দক্ষতার মাধ্যমে অর্জিত রাজস্ব দিয়েই সরকার পরিচালনা ব্যয় ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। সে কারণে এনবিআরের আওতাধীন রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে কঠোরভাবে শৃঙ্খলা অটুট ও দৃঢ় রাখার জন্য রাষ্ট্রকে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সেজন্য এ দুটি ক্যাডার কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়।