Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 6:45 pm

ডিসিসিআই-ইআরএফ সভায় বক্তারা: উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জনের পথে মূল বাধা হয়ে আছে অপ্রতুল অবকাঠামো। দক্ষ মানবসম্পদের অভাব এবং উচ্চ করহারও বিনিয়োগের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা। এছাড়া মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে ধীরগতি একটি বড় সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধানে নীতিগত সংস্কার জরুরি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে গতকাল বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন বক্তারা। ‘রোড টু ২০৩০: অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৌশল নির্ধারণ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নে সঠিক পথেই রয়েছে। তবে দুর্নীতি অগ্রগতির যাত্রাকে ব্যাহত করছে। এছাড়া আমাদের দেশে অপচয়ের সংস্কৃতি রয়েছে, যা অনেক সময় দুর্নীতির চেয়েও বেশি ক্ষতির কারণ হিসেবে কাজ করছে। এ অবস্থা নিরসনে তিনি আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থারও সংস্কার জরুরি বলে মত দেন।

সভায় ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল, ঢাকা চেম্বার সভাপতি আবুল কাসেম খান, দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সভায় ইআরএফ সভাপতি বলেন, ঢাকা চেম্বারের পক্ষ হতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, এজন্য আমাদের মানবসম্পদকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা প্রয়োজন। এজন্য অর্থনীতি ও অবকাঠামো উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি।

ঢাকা চেম্বার সভাপতি আবুল কাসেম খান তার উপস্থাপনায় বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে হলে শুধু অবকাঠামো খাতে প্রতিবছর ২০-২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সাত শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে; তা এখন আট শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এজন্য বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও পিপিপির কার্যক্রম বেগবানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ধীরগতি একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ, ভূমি, যোগাযোগ অবকাঠামোর অপ্রতুলতা, দক্ষ মানবসম্পদের অভাব এবং উচ্চ করহার বিনিয়োগের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা। ডিসিসিআই সভাপতি কয়লানীতির দ্রুত বাস্তবায়ন এবং আমাদের নিজস্ব কয়লার ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বেগবান করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা একান্ত আবশ্যক। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে করপোরেট করহার সবচেয়ে বেশি। এ হার কমানোর পাশাপাশি করের আওতা বাড়ানোর জন্য কার্যকরী পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি। তিনি ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টের আওতায় ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সম্ভাবনার দুয়ার খুবই সংকীর্ণ। বাংলাদেশের ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয়ের হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তিনি জানান, ডুইং বিজনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম। তিনি তৈরি পোশাক খাতসহ অন্যান্য খাতে নিয়োজিত মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতের উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোরারোপ করেন।

ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে আমাদের অবকাঠামো খাত পর্যাপ্ত নয়, তাই এখনই অবকাঠানো খাতের মানসম্মত উন্নয়নের কার্যকর প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে রেলপথ ও নৌপথের উন্নয়নের জন্য বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।

আসিফ ইব্রাহীম বলেন, আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো কাক্সিক্ষত গতিতে এগোচ্ছে না। সম্প্রতি বিডা’র পক্ষ হতে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; তবে তা সফল করতে বিনিয়োগসহায়ক সব সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ১২.৫ শতাংশ শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করে এবং সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের ইপিজেড এলাকায় শ্রম আইন সংস্কারের পরামর্শ দেয়। অন্যথায় ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। ইতোমধ্যে ৭৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়েছে; তার মধ্যে ২৩টি অঞ্চলে মাটি ভরাটসহ অন্যান্য সেবা-সংযোগ প্রদানের কাজ চলমান। বেসরকারি খাতে তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। দেশের অবকাঠামো ও বিনিয়োগ সমস্যা সমাধানে বেজা বিশেষ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, এখন আর এগুলো স্বপ্ন নয়; বাস্তবেই আমরা বিনিয়োগবান্ধব সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি।

আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, ডিসিসিআই পরিচালক খন্দকার আতিক-ই-রাব্বানী, বার্তা সংস্থা এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম, ডেইলি স্টারের সাংবাদিক সাজ্জাদুর রহমান, মানবকণ্ঠের বিজনেস এডিটর সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, নিউজ টুডের সিটি এডিটর বদিউল আলম প্রমুখ অংশ নেন।