নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯-এর প্রভাব কমতে থাকায় চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। টানা আট মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী এ খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি। দুই বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো ডিসেম্বরেও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক দুই অঙ্কের ঘরে অবস্থান করেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনার প্রভাব কমে আসায় ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ছে। আর সে কারণেই বাড়ছে ব্যাংকের বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যসূত্রে জানা যায়, গত বছর ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নভেম্বরের চেয়ে দশমিক ৫৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশে উঠেছে, যা নভেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। সুতরাং ২০২০ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি ঋণ পেয়েছেন।
এছাড়া অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে হয়েছিল আট দশমিক ৭৭ শতাংশ। খাতসংশ্লিষ্টরা বলেন, অধিক পরিমাণ আমদানি বৃদ্ধি, বিশেষ করে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ার ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ বাড়ছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়া অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো দিক। এর মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তার মানে নতুন বছর বিনিয়োগের একটি ইতিবাচক আবহ নিয়েই শুরু হচ্ছে।’
ওমিক্রন এ খাতে ফের কিছুটা প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, জানুয়ারি শুরু থেকে কভিডে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। ফলে আগামী মাসে বেসরকারি ঋণ কিছুটা কমবে, তবে ফেব্রুয়ারিতে আবার বাড়বে বলে প্রত্যাশা তার।
তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের ঋণ ২০ শতাংশে যেতে পারে। তবে এর ফলে অর্থনীতিতে পুরোপুরি গতি ফিরবে। এর বেশি হলে কিছুটা সমস্যাও রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাইয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল। তাতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয় ১৪ দশমিক আট শতাংশ। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ডিসেম্বর শেষে উদ্যোক্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যের চেয়ে এখনও প্রায় চার শতাংশ ঋণ কম পেয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কভিডের কারণে গত মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি খুবই কম ছিল। সে সময় সাত দশমিক ৫৫ শতাংশে ঋণের প্রবৃদ্ধি নেমে আসে। এর পর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ছে।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল আট দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছিল যথাক্রমে আট দশমিক ৫১ ও আট দশমিক ৭৯ শতাংশ। এপ্রিলে নেমে আসে আট দশমিক ২৯ শতাংশে। মে মাসে তা আরও কমে নেমে যায় সাত দশমিক ৫৫ শতাংশে।
তবে করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি খানিকটা বেড়ে আট দশমিক ৩৫ শতাংশে উঠে কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়। তার পর থেকে ঋণপ্রবাহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। জুলাই ও আগস্টে এই সূচক ছিল যথাক্রমে আট দশমিক ৩৮ ও আট দশমিক ৪২ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে আট দশমিক ৭৭ শতাংশ ও অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।