আসাদুজ্জামান নূর: আর্থিক খাতের ব্যাংক, বিমা ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফই) শেয়ারে ভর করে গত সপ্তাহে নেতিবাচক ধারায় লেনদেন শেষ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। একইসঙ্গে শেয়ার লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের তালিকায় থাকা কোম্পানির। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পুরো ঝোঁক ছিল ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের কোম্পানিগুলোর প্রতি। অতীতেও এ সময়ে এসব কোম্পানির শেয়ারের দামে উত্থান দেখা গেছে।
বিনিয়োগকারীদের ঋণ দেয়ার মানদণ্ড পরিবর্তন করাটাও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকেই। এতেই বাজারের লেনদেন বেড়েছে। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার লেনদেন তথ্য বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন চিত্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু ডিসেম্বর কেন্দ্রিক কোম্পানির লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজার মূলধন ও শেয়ার লেনদেন বেড়েছে। এসব কোম্পানি বাদে মৌলভিত্তির অনেক কোম্পানির শেয়ারের দরই হ্রাস পায়। এজন্য তালিকাভুক্ত অধিকাংশ শেয়ারের দর কমে গেছে। জ্বালানি, প্রকৌশল ও বস্ত্র খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দরপতন হয়।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেয় ৩৮৪টি সিকিউরিটিজ। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটদর বৃদ্ধি পায় ১৭৩টির, কমে যায় ১৯১টির, অপরিবর্তিত ছিল ১৬টির ও লেনদেন হয়নি চারটির।
জানা গেছে, দর হারানো কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করেই অনেকে ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের শেয়ার কিনেছেন। আবার ঋণসীমার মানদণ্ড পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ নিয়েছেন কেউ কেউ। এতেই নির্দিষ্ট কয়েকটি খাতের শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে।
তথ্য বলছে, ডিএসইর মোট লেনদেনে ব্যাংক খাতের অবদানই ২৫ দশমিক দুই শতাংশ। গত সপ্তাহে খাতটিতে বিনিয়োগকারীরা আট দশমিক পাঁচ শতাংশ গেইন দেখেছেন আগের সপ্তাহের তুলনায়। গেইনারের দিক দিয়ে একে উল্লম্ফন হিসেবেই দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। লেনদেনে এরপরই অবদান রাখে ওষুধ খাত ১২ দশমিক চার শতাংশ, এনবিএফআই চার দশমিক সাত শতাংশ ও বস্ত্র খাত ১১ দশমিক তিন শতাংশ।
এদিকে গেইনারের দিক দিয়ে এরপরই রয়েছে আইটি পাঁচ দশমিক আট শতাংশ, জীবন বিমা তিন দশমিক দুই শতাংশ, এনবিএফআই দুই দশমিক আট শতাংশ, সাধারণ বিমা এক দশমিক ছয় শতাংশ দেখতে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিএসইর পিই রেশিও আগের সপ্তাহের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহ শেষে পিই রেশিও ছিল ১৮ দশমিক ৭৪, আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৮ দশমিক ৬৩। অন্যদিকে আগের চেয়ে লোকসান দেখেছেন প্রকৌশল শূন্য দশমিক আট শতাংশ, জ্বালানি এক দশমিক আট শতাংশ, বস্ত্র তিন দশমিক আট শতাংশ ও পাট খাতে ছয় দশমিক ৯ শতাংশ।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ‘জাঙ্ক’ শেয়ারে প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। ফলে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ারে ‘ক্রয় চাপ’ ও ‘এন’ ক্যাটেগরির শেয়ারের ‘বিক্রয় চাপ’ ছিল। ডিএসইর তথ্যমতে, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গেল সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে চার হাজার ৬০৮ কোটি টাকা।
গত সপ্তাহ শেষে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৯৫ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৮৯ দশমিক ২১ পয়েন্ট। প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে বেড়েছে ইসলামি শরিয়াহ্ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি বেড়েছে দুই দশমিক ৭৫ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ১৫ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট। বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও টানা দুই সপ্তাহ বেড়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৭৬ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য ও বাজার তথ্যমতে, শেয়ারের বিপরীতে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে নতুন বিধান করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এটিও বাজারকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করে।
বিএসইসি’র নতুন বিধান অনুযায়ী, যেসব শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ৪০-এর কম, সেসব শেয়ারে এখন থেকে ১০০ টাকার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা (১:শূন্য দশমিক আট) ঋণ সুবিধা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। আগে সর্বোচ্চ ঋণ সুবিধার এ বিষয়টি সূচকের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সর্বোচ্চ আট হাজারে না পৌঁছানো পর্যন্ত সর্বোচ্চ হারে ঋণ সুবিধা দেয়ার বিধান ছিল আগে। পাশাপাশি যেসব শেয়ারের পিই রেশিও ৪০ বা তার বেশি, সেসব শেয়ার ঋণের অযোগ্য বিবেচিত হতো। এখন ঋণের বিষয়টি সূচকের সঙ্গে সম্পৃক্ত না রেখে শুধু পিই রেশিও’র সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেয়া হয়েছে।
একক কোম্পানি হিসেবে গত সপ্তাহে শেয়ারের দর বাড়ার শীর্ষে ছিল সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও ওয়ান ব্যাংক। অন্যদিকে শেয়ারদর কমার শীর্ষে ছিল যথাক্রমে ন্যাশনাল ফিড, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, সায়হাম কটন, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম ও প্যাসিফিক ডেনিমস লিমিটেড প্রভৃতি। সপ্তাহজুড়ে টাকার অঙ্কে লেনদেনের শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো), আইএফআইসি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ওরিয়ন ফার্মা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড প্রভৃতি।