Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:16 am

ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি ঋণের সুদের ওপর কর দিতে হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যবসায়ীদের নেয়া বিদেশি ঋণের সুদের ওপর যে ২০ শতাংশ উৎসে কর দিতে হতো, তা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহতি দিয়ে গত বছরের ৩০ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। এবার তা আরও ১০ মাস বাড়িয়ে অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহতির মেয়াদ বাড়িয়ে গত ৩ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর।

ফলে এখন থেকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে কোনো কর দিতে হবে না। তবে ঋণের সুদ অগ্রিম পরিশোধের ক্ষেত্রে এই কর অব্যাহতি প্রযোজ্য হবে না। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কর ছাড় পাওয়ার কারণে তাদের সুদ বাবদ খরচ ১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে দুই শতাংশ কমবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের সুদ পেমেন্টের ওপর ২০ শতাংশ ‘উইথহোল্ডিং ট্যাক্স’ আরোপ করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য এনবিআরকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনবিআরকে জানায়, এই কর বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়ার খরচ বাড়াবে। ফলে বিদেশি ঋণ নেয়ার খরচ এক-চতুর্থাংশ বেড়ে যাবে।

গত ৩১ আগস্ট পাঠানো একটি চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এনবিআর এর আগে ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর জারি করা একটি সার্কুলারের মাধ্যমে বিদেশি ঋণের সুদের ওপর কর মওকুফ করেছিল। তবে চলতি বছরের ২৩ মে একটি সার্কুলার জারির মাধ্যমে এই সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়। ফলে স্থানীয় ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট ও বায়ার্স ক্রেডিট দ্বারা পাওয়া বিদেশি ঋণের বিপরীতে সুদ পেমেন্টের ক্ষেত্রে এখন থেকে ২০ শতাংশ উৎস কর কাটা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, শেষ পর্যন্ত ঋণগ্রহীতারাই এই অতিরিক্ত খরচ বহন করবে, বিদেশি ঋণদাতারা নয়। ফলে গ্রস-আপ ভিত্তিতে হিসাব করা হলে করের হার কার্যত ২৫ শতাংশ বাড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে, বিদেশি ঋণের সুদের হার এরই মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে এবং নতুন আরোপিত কর এই ঋণগুলোকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণের সুদহার এবং বিনিময় হারের ঝুঁকির কারণে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট, করপোরেট ও আমদানিকারকরা বিদেশি ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত হবে, যা টাকার তারল্য ও বিনিময় হারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার এখন আগের লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেটের (এলআইবিওআর) পরিবর্তে ইউএস ফেডারেল রিজার্ভের নীতিগত হার সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) অনুসরণ করছে। সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট এরই মধ্যে কভিডকালে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২২ সালের শুরুর দিকেও এই হার এক শতাংশের নিচে ছিল। ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক বাজারে ঋণের সুদহার অনুরূপভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি ঋণ ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত সুদ যোগ হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী সুদহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সুদ দেয়ার ওপর বর্তমান বাজেটে আরোপিত ২০ শতাংশ ‘উইথহোল্ডিং ট্যাক্স’-এর কারণে বিদেশি ঋণ এখন আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। এ ধরনের ঋণের খরচ এখন প্রায় ১১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট অনুযায়ী, জুলাই থেকে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ২০ শতাংশ ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছিল। মূলত, ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের বিদেশি ঋণ নেয়া কমাতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। বিদেশি ঋণের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে নতুন করে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কমে যায়। ফলে শর্ট টার্ম ফরেন লোন কমতে শুরু করে। ব্যবসায়ীরা নতুন ঋণ নেয়ার বদলে পুরোনো ঋণগুলো রিপেমেন্ট করতে শুরু করেন। তবে দেশের ব্যাংক চ্যানেলে ডলার সংকট থাকায় এসব বিদেশি ঋণ পরিশোধ রিজার্ভকে কমিয়ে দেয়।