ডি-লিস্টেডের পর দৌরাত্ম্য কমছে বিতর্কিত কোম্পানির

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সক্রিয়তায় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শেয়ার লেনদেন বাড়ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও বেড়েছে। সদ্য সমাপ্ত সপ্তাহে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। এ কারণে বিতর্কিত কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির প্রবণতা আগের চেয়ে কমেছে। দুই কোম্পানিকে তালিকাচ্যুতি
(ডি-লিস্টেড) করার পর এসব কোম্পানির প্রতি আগ্রহ কমছে বিনিয়োগকারীদের।
গত সপ্তাহে দর হারানো কোম্পানির তালিকায় শীর্ষে এসেছে ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানি জুট স্পিনার্স। সেইসঙ্গে ওই ক্যাটেগরির আরও চারটি কোম্পানির দরও কমেছে।
দুর্বল কোম্পানির দর কমা বা পিছিয়ে পড়াকে বাজারের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেছিলেন, ‘বাজারে ভালো মানের শেয়ারের পরিমাণ যত বাড়বে, কারসাজিও তত কমে যাবে। ভালো শেয়ার বেশি না হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করেন। আর স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারেই কারসাজি বেশি হয়।’
প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দৈনিক গড় লেনদেন প্রায় ৮৯১ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। এর আগের সপ্তাহে এ লেনদেন ছিল ৮৭৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ সপ্তাহেও ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে।
তথ্যমতে, সদ্য সমাপ্ত সপ্তাহে ডিএসইতে ‘এ’ ক্যাটেগরির শেয়ারের লেনদেন আগের সপ্তাহের চেয়ে ৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। টাকার অঙ্কে ওই লেনদেন তিন হাজার ৯২২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইতে ‘এ’ ক্যাটেগরির প্রায় তিন হাজার ৭৫১ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর সপ্তাহ শেষে দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানিই ছিল ‘এ’ ক্যাটেগরির।
এদিকে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীর আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রভাব পড়েছে বিতর্কিত কোম্পানির শেয়ারে। সপ্তাহ শেষে লাগামহীনভাবে অস্বাভাবিক দর বাড়তে থাকা বিতর্কিত স্বল্প মূলধনির কোম্পানির অধিকাংশেরই শেয়ারদরই কমেছে। ফলে গত সপ্তাহে শেয়ারদর হারানোর শীর্ষ ১০টির অধিকাংশই ছিল ‘জেড’ ক্যাটেগরির বিতর্কিত ও স্বল্প মূলধনি কোম্পানি।
ডিএসইর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত সপ্তাহে প্রায় ২৯ শতাংশ শেয়ারদর হারিয়ে ডিএসইর দর হারানোর শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় প্রথম অবস্থানে এসেছে স্বল্প মূলধনি কোম্পানি জুট স্পিনার্স। গত বছরের শেষদিক থেকে চলতি বছরের জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ে অস্বাভাবিক দর বেড়ে বিতর্কে জড়িয়েছে কোম্পানিটি। দৃশ্যমান কারণ না থাকলেও ওই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। গত সপ্তাহে বড় দরপতনের মুখে পড়েছে জুট স্পিনার্স। এক সপ্তাহে প্রায় ২১ শতাংশের বেশি দর হারিয়ে এর পরের অবস্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের বিতর্কিত কোম্পানি লিবরা ইনফিউশন। সম্প্রতি কোম্পানিটির অস্বাভাবিক দর বাড়ার প্রবণতা এ সপ্তাহে এসে থমকে গেছে। একইভাবে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের স্বল্প মূলধনি এবং লোকসানি কোম্পানি মেঘনা পিইটি ২১ শতাংশের বেশি দর হারিয়ে তৃতীয় অবস্থানে উঠেছে।
একইভাবে সর্বশেষ সপ্তাহে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের অপর কোম্পানি মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ২১ দশমিক শূন্য এক শতাংশ, স্বল্প মূলধনি এপেক্স ট্যানারি ১৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, প্রকৌশল খাতের কোম্পানি আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ, মুন্নু সিরামিকস ১৬ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ, শ্যামপুর সুগার মিলস ১৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ার ১৫ শতাংশ শেয়ারদর কমায় ওই কোম্পানিগুলোও দর হারানো কোম্পানির তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
এর আগে সদ্য বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষ সময়ে জুন ক্লোজিংয়ে কর মওকুফের সুবিধা নিতে মৌসুমি বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে শুরু করেন। এরপর কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসায় এ নতুন বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রয়েছে। তাই মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা বাড়ছে। এর প্রভাবেই মূলত স্বল্প মূলধনি-বিতর্কিত কোম্পানির শেয়ারদর কমতে শুরু করেছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে হলে কারণ ছাড়া শেয়ারদর বৃদ্ধির প্রবণতা রুখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিমুখী করতে হবে বিনিয়োগকারীদের। তাহলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাজারও বিনিয়োগকারীবান্ধব হবে।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০