ডুবে গেছে ক্ষেতখামার বাড়িঘরে কোমড় সমান পানি

oppo_0

প্রতিনধি, লালমনিরহাটঃ তিস্তা নদী থেকে হাপ কিলোমিটার দূরের পাকা সড়কের উচু স্থানে বসে ভাত রান্না করছে আকলিমা খাতুন ও তার ষাটোর্ধ শাশুরি।তাদের বাড়িতে কোমড় সমান পানি উঠেছে গতকাল।চাল-ডাল ও সবজি দিয়ে খিচুরি রান্না করছিলেন।

আমতলা এলাকায় সড়কের উপর দিয়ে তীব্র স্রোত চলে যাচ্ছে তিস্তা নদীর দিকে।এই সড়কে সকালের দিকে আরো বেশি পানি ছিলো।কেউ বের হতে পারেনি।এখন বিকাল বেলা একটু পানি কম হয়েছে,টান ধরেছে নদীর দিকে।সড়কে তবুও হাঁটু পানি।সেই পানি পার হয়ে বাড়ি থেকে বাজার সদাই কিনতে সব বয়সী মানুষ হাটবারের হাটে যাচ্ছে।তিন দিনের বন্যায় তারা এখনো কোনো ত্রান সহায়তা, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট,গবাদীপশুর দেখভাল করার মত কাউকে পান নাই।নদী পাড়ের লোকজন জানান আজকে সরকারি কেউ একজন এসে নৌকা দিয়ে ঘুরে বেরিয়ে গেছেন।

হাসিনা বেগম,আজিজুল ইসলাম,আব্দুল কাইয়ুম বলেন,তিন দিন হলো পানি আসছে।ক্ষেত খামার সব তলিয়ে গেছে।কোনো সরকারি লোক আসে নাই।এক ফোটা ত্রাণ দেয় নাই।মেম্বার চেয়ারম্যানরা আসে নাই।

সরেজিম এমন চিত্রই উঠে আসে প্রতিবেদকের ক্যামেরায়।এক এক করে তারারা তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।

২৯ সেপ্টেম্বর তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে সকাল ৬টায় ২ সেন্টিমিটার উটর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।সকাল ৯টায় পানি কমে গিয়ে ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।বিকাল তিনটায় ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

অপর দিকে ভাটিতে থাকা তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে সকাল ৬টায় ২৯ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৯টায় ৩১ সেন্টিমিটার,বিকাল তিনটায় ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুণীল কুমার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন,বিগত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের জলপাইগুড়ি ১৬৪.০, কালিম্পং ১৩০.০, দার্জেলিং ৭৭.০, কুচবিহার ৫৪.০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

ভারত থেকে আসা ঢলের কারণে তিস্তা ব্যারাজের উজানে থাকা পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে।তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ।রোপা আমন সহ শীতকালীন আগাম সবজি ও শীতকালীন বীজতলার ক্ষতি হয়েছে।

দহগ্রামের কৃষক একরামুল বলেন,ভারতের পানি দ্রুত ঢুকে পড়ছে।কোনো সহযোগীতা নাই।রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।ফসলের ক্ষতি হয়েছে।তিস্তা ভাঙন ও পানি রোধে কেউ ব্যবস্থা নেয়নি।

দহগ্রাম ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোঃ রাব্বানি বলেন,বেশ কিছু এলাকায় ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে।ক্রমাগত শঙ্কাজনক ভাবে পানি বাড়ছে।এ পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাইনি।চেয়ারম্যান পরিষদে নাই।বিএনপির কিছু উশৃঙ্খল লোকজন আমাদেরকে পরিষদে যেতে দিচ্ছেনা।এ অবস্থায় আপৎকালীন কিছু করার নাই।

ভাটিতে থাকা কালিগঞ্জ,আদিতমারী,লালমনিরহাট সদর উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকার ফসলের মাঠ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।এতে ওই এলাকার আগাম জাতের ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

চর শৌলমারি ব্লোকের দায়িত্বে থাকা উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরিদ বলেন,চীনাবাদামের ক্ষতি হয়েছে।শীতকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে।ধানের কি রকম ক্ষতি হবে,তা বলা যাচ্ছেনা।বৃষ্টির পরে কারেন্ট পোকা নামের এক ধরনের পোকার আক্রমণ হতে পারে।তবে পানি না কমলে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব বলা যাচ্ছেনা।

জেলা খামারবাড়ির উপপরিচালক ড.মোঃ সাইখুল আরেফিন বলেন,বৃষ্টির পানিটা আমনের ক্ষেতে আমাদের জন্য রহমতের মত।মাঠ পর্যায়ে আগাম নির্দেশনা দেয়া আছে।তারা খোঁজখবর রাখছেন।কিছু শীতকালীন সবচিন ক্ষেতে পানি আছে।এগুলো দুই একদিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে রিকোভার হবে।উজানের পানি না আসলে ক্ষতির সম্ভবনা কম।দুইচারদিন পরে ক্ষয়ক্ষতি বোঝা যাবে।

রংপুর আবহাওয়া দপ্তরের প্রধান আবাহাওয়াবীদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,আগামী ২৪ ঘন্টায় রংপুর অঞ্চলের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।কিছু এলাকায় দমকা হাওয়া সহ মাঝারি,হালকা,কিছু এলাকায় ভারিবৃষ্টিপাত হতে পারে।

জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার প্রতিবেদককে বলেন,বন্যাকবলিত স্থান পরিদর্শন করেছি।লালমনিরহাটে এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।শিশু খাদ্যের জন্য ৫ লক্ষ টাকা,নগদ ১৩ লক্ষ টাকা,চাল ৯০ মেট্রিকটন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০