Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:44 pm

‘ডুব’ নিয়ে আমি শঙ্কিত: শাওন

শোবিজ ডেস্ক: ফারুকী‘যে কেউ অনুমতি চাইলে আমি সেটা দিতাম। হুমায়ূন পরিবারের শুধু আমি নই, যে কারও কাছ থেকেই তিনি অনুমতি নিতে পারতেন।’ গতকাল রোববার ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও ‘ডুব’ চলচ্চিত্র নিয়ে কথাগুলো বলেন হুমায়ূনপত্নী মেহের আফরোজ শাওন। শাওন ধারণা করছেন, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে যে ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে। আর এতে ‘স্পর্শকাতর’ কিছু বিষয় থাকতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাওন বলেন, ‘গত বছরের শেষদিকে ভারতের ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকা থেকে প্রথম ‘ডুব’ ছবিটির পটভূমি সম্পর্কে জানতে পারি। তাতে লেখা হয়, ছবিটি হুমায়ূন আহমেদের জীবনকে ঘিরে। খবরটি আমাকে বিস্মিত করে। তারপর এ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট হয়। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ছবির মূল চরিত্রের অভিনয়শিল্পী ইরফান খান শুটিংয়ের আগে হুমায়ূন আহমেদের প্রচুর ভিডিও দেখেছিলেন। সেগুলো দেখেই হুমায়ূন আহমেদের কথা বলার ধরন, অঙ্গভঙ্গি এসব নিয়ে হোমওয়ার্ক করেছিলেন। ছবির আরেক অভিনয়শিল্পী পার্নো মিত্র তার ফেসবুক পেইজে দেওয়া স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, তার অভিনীত চরিত্রের নাম ‘মেহের আফরোজ শাওন’। যদিও কিছুক্ষণ পর তা সম্পাদনা করে বাদ দেন। সংগত কারণেই আমি আশঙ্কা বোধ করি। কেননা, ছবিটির পরিচালক তার কোনো মন্তব্যেই ছবিটির সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের জীবনের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেননি।’

সংবাদ সম্মেলনে শাওন আরও বলেন, ‘আমার আশঙ্কা প্রবল হয় যখন ‘ডুব’ ছবির অভিনয়শিল্পী রোকেয়া প্রাচী তার সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেন, ‘ডুব’ হুমায়ূন আহমেদেরই জীবনকাহিনী। তার সাক্ষাৎকার থেকে কাহিনীর যে সারসংক্ষেপ জানা যায়, তা হুমায়ূন আহমেদের জীবনের কিছু বিতর্কিত অংশ, যার সত্যতা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।’

শাওন বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ বাংলা কথাসাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক। তিনি আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার মানে কি এই যে, তাকে নিয়ে মনগড়া কাহিনীচিত্র বানিয়ে ফেলা যাবে। হুমায়ূন আহমেদ নাম বদলে চরিত্রের অন্য যে নামই দেওয়া হোক, সেই চরিত্র যদি হয় বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখকের, সংসারজীবনে যার দুটি অধ্যায় রয়েছে এবং ক্যানসার আক্রান্ত হয়েই যার জীবনাবসান হয়েছেÑসেটি বুঝতে কোনো দর্শকের গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না।’

ছবিটি দেখে বর্তমান প্রজšে§র দর্শক হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্ক ভুল তথ্য পেতে পারেনÑএমন শঙ্কাও প্রকাশ করেন শাওন। এ সময় শাওনকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন কি-না। উত্তরে শাওন বলেন, ‘তাকে নিয়ে সিনেমা বানাতে যোগ্যতা লাগে। সেটা করার জন্য এখনও আমি তৈরি নই।’

এদিকে শাওন চিঠি দেওয়ার পর ১৬ ফেব্রুয়ারি কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই প্রিভিউ কমিটির দেওয়া অনাপত্তিপত্র স্থগিত করে তথ্য মন্ত্রণালয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এমন হঠাৎ সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ফারুকী। চলচ্চিত্রটির আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তার অভিমত ‘সরকারকে যে বা যারা ভুল বুঝিয়েছে, তারা আসলে বাংলাদেশকেই বিব্রত করছে।’

শাওনের আশঙ্কা সম্পর্কে জানতে চাইলে এ নির্মাতা বলেন, ‘এখন শাওন কোনো ইস্যু না, শাওন চ্যাপ্টার ক্লোজড। আমরা এখন তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে যাবো। তাদের কাছে জানতে চাইবো তারা কেন এ স্থগিতাদেশ দিয়েছে। আশা করি সরকার তার ভুল বুঝতে পারবে এবং চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাবে।’

শাওনের আপত্তির বিষয়টির কোনো যৌক্তিকতা নেই উল্লেখ করে ফারুকী বলেন, ‘পৃথিবীতে এন্টারটেইনমেন্টের ল’ আছে। সেখানে বলা হয় কোনো লোকের নাম যদি ব্যবহার না হয় এবং এটা যদি না বলা হয় যে, ছবিটি তার বায়োপিক, তাহলে এ বিষয়ে কোনো মামলা করা যাবে না। কেন এ নিয়মটা করা হয়েছে, সেটা পরিষ্কার করছি। ধরুন, একটি ছবিতে প্রেম দেখানো হয়েছে, আমার জীবনেও প্রেম আছে, আমি বললাম এ ছবিটা ব্যান্ড করে দেন, এটা কী সম্ভব? তাহলে তো সবাই গিয়ে ছবি ব্যান্ড করার আবেদন করতে পারতো।’

চলচ্চিত্রটিতে এক চলচ্চিত্র নির্মাতার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ভারতীয় তারকা ইরফান খান। তার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকেয়া প্রাচী। আর মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিশা। চলচ্চিত্রটির কাহিনীতে মেয়ের বান্ধবীর সঙ্গে ইরফান খানের বিয়ে হয় বলে জানা যায়। ওই চরিত্রে অভিনয় করেছেন পার্নো মিত্র।

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদও জীবনে এমন একটি অধ্যায়ে প্রবেশ করেন, যেখানে তার কন্যা শীলা আহমেদের বান্ধবী মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে প্রণয় থেকে পরিণয় ঘটে তার। সিনেমাটি কি তাই পরোক্ষভাবে হুমায়ূনের জীবনকেই অনুসরণ করছে না?

বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে ফারুকী বলেন, ‘আরে ভাই, মেয়ের বান্ধবীর সঙ্গে বিয়ে কি অমিতাভ বচ্চনের ‘নিঃশব্দ’ মুভিতে নেই? ‘আমেরিকান বিউটি’তে নেই? ‘পয়েজন আইভি’ তে নেই? এটা কী কথা?’

যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘ডুব’-এর বাংলাদেশি প্রযোজক জাজ মাল্টিমিডিয়া। ভারতে সিনেমাটির প্রযোজনা করছে ইরফান খানের প্রযোজনা সংস্থা আইকে ফিল্মস।