নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ এখনও চলমান। এরই মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেল। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এডিস মশাবাহিত এই রোগে। তাতে এ বছর ২ আগস্ট পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২৮৩।
দেশে এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে এক বছরে সর্বাধিক ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া যে হারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ডও ছাড়িয়ে যাবে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগী ধরা পরে ২০০০ সালে। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর ২০০৬ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে ৪৪, ৫৮, ১০, ১৩, ৪ ও ১১ জন মারা যান ডেঙ্গুতে। ২০০৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যুর খবর নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে।
এরপর ২০১১ সালে ৬ জন, ২০১২ সালে ১ জন এবং ২০১৩ সালে দুজন মারা যায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। ২০১৪ সালে আবার কারও মৃত্যু হিসাবে নেই। ২০১৫ সালে ছয়জন, ২০১৬ সালে ১৪ জন, ২০১৭ সালে আটজন এবং ২০১৮ সালে ২৬ জনের প্রাণ কেড়ে নেয় এডিসবাহিত এই রোগ।
২০১৯ সালে সারাদেশে রেকর্ড এক লাখ এক হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। এরপর ২০২০ সালে সাতজন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মারা যান ডেঙ্গুতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৫৮৯ রোগী। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৭১৬ জনে।
বাংলাদেশে এর আগে কেবল ২০১৯ সাল এবং ২০২২ সালে এর চেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে ২০১৯ সালে এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন এবং ২০২২ সালে ৬১ হাজার ৮৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। তবে এ বছর ডেঙ্গু সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় ভর্তি রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা সামনে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
গত এক দিনে যত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে এক হাজার ৪৮৮ জনই ঢাকার বাইরের। ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ১০১ রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ হাজার ২১০ রোগী ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় চার হাজার ৬৫০ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় রয়েছেন চার হাজার ৫৬০ জন।
এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। জুন মাসে পাঁচ হাজার ৯৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এছাড়া জুলাই মাসে ভর্তি হয়েছেন ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন। জুন মাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হলেও জুলাই মাসে প্রাণ যায় ২০৪ জনের। আর আগস্টের প্রথম দুই দিনে সাত হাজার ৮৮৪ জন ভর্তি হন হাসপাতালে। মৃত্যু হয়েছে ৩২ জনের।
এর বাইরে গত জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে এক হাজার ৩৬ জন এবং জুনে পাঁচ হাজার ৯৫৬ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন, মে মাসে দুজন এবং জুনে মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের।
