Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 8:46 pm

ডেঙ্গুতে বাড়ছে মৃত্যু প্রয়োজন সচেতনতা

একটি সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ রাজধানী ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে দেখা গেলেও সম্প্রতি কয়েক বছরে তা দেশের অধিকাংশ জেলায় ছড়িয়েছে। প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে শত শত মানুষ। বছরের এ সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়লেও প্রায় সারা বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, সারাদেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ হাজার ৯৫৪ জন রোগী এবং বছরের মাঝা মাঝি এ সময়ে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ জনে। দিনের পর দিন এভাবেই বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু রোগী আক্রান্তের সংখ্যা। দেশে বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছেন বহু মানুষ। এর মধ্যে অনন্য রোগের প্রভাবে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। তার ওপর প্রতি বছর এ মৌসুমে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা। বর্তমানে এ পরিস্থিতি সামাল দিতে কোথাও চিকিৎসকের সংকট বা পর্যাপ্ত বেডের অভাবের খবর শোনা না গেলেও ডেঙ্গু যে হারে বেড়ে চলেছে তা অতি দ্রুতই রোগী ভর্তি নিয়ে হিমশিম খেতে হবে হাসপাতালগুলোকে, যা বিগত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এজন্য প্রতি বছরের মতো ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এভাবে যদি বাড়তে থাকে তাহলে সেই পরিস্থিতি সামাল দেয়া খুব কঠিন হয়ে পড়বে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকতেই বা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন এটি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে, অন্যথায় এর ভয়াবহতা চরম পর্যায় পৌঁছাবে।

বিশেষ করে দেশে প্রথম দিকে বৃষ্টিপাতের হার খুব বেশি না হলেও বর্তমানে বেশ ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। পাশাপাশি আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে এবার এডিস মশার প্রজনন কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ডেঙ্গুর প্রজনন ঠেকাতে সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি বরাবরের মতোই ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে সবচেয়ে যে বিষয়টি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সেটি হলো, সাধারণ মানুষের সচেতনতার চরম অভাবের কথা। প্রকৃতপক্ষে এটাই সত্য যে, আমরা নিজেরাই বেশ অসচেতন। কারণ সচরাচর দেখা যায়, আমাদের বাড়ির আঙিনা, ফুলের টব, এয়ারকন্ডিশন বিশেষ করে নির্মাণাধীন বা পরিত্যক্ত ভবনের বেইজমেন্টসহ ছাদের কোণে পানি জমে থাকে। কখনও কখনও এগুলো পরিষ্কার করতে আমাদের চরম গাফিলতি লক্ষ্য করা যায়। ফলস্বরূপ এগুলোর মাধ্যমে আমরা নিজেরাই এডিস মশার প্রজননে সহায়তা করি। এজন্য যদি এমন অসচেতন হয়ে মশার প্রজনন করি তাহলে সিটি করপোরেশন নয়, কোনো সংগঠন, অধিদপ্তরের পক্ষেও সম্ভব হবে না মশামুক্ত গ্রাম বা শহর উপহার দেয়া।

এদিকে সারাদেশে ভর্তি রোগীদের নিয়মিত ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতি বছরই ডেঙ্গুর প্রকোপ ঢাকাতেই সব থেকে বেশি দেখা যায়। এ বছরও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে প্রতি বছরের মতো ঢাকার বাইরে এক-চতুর্থাংশের বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। ডেঙ্গু শনাক্তের সব ধরনের পরীক্ষার সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গুর মূল পরীক্ষা এনএস১ সর্বোচ্চ খরচ ৫০০ টাকা। এজন্য ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলেই আমাদের ডেঙ্গুর টেস্ট করাতে হবে। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ওষুধ খেতে হবে। পাশাপাশি ফুলের টব, হাঁড়ি পাতিল, বাড়ির আঙিনাসহ আশপাশে যেন দুই তিন দিনের বেশি কোথাও সামান্য পানি জমে না থাকে সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। পরিস্থিতির যাতে আর অবনতি না হয় সে জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে মশা নিধন কর্মসূচিতে আরও বেশি জোর দিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে মশারি ব্যবহার করতে হবে।  দেশে ডেঙ্গু রোগ ব্যবস্থাপনায় হাসপাতাল পরিষেবা আরও উন্নত করতে হবে। সর্বোপরি সব শ্রেণির নাগরিকদের আরও বেশি সচেতনতা বাড়াতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজ করতে না পারলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

রিয়াদ হোসেন

শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা