Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 1:31 am

ডেঙ্গুর প্রকোপে বিপর্যস্ত জনজীবন

এডিস মশা দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব দেখা যায়। বর্ষাকাল এলেই যেন বিদ্যুৎ গতিতে বেড়ে যায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায়। বর্ষার ফলে যেমন বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যায় তদ্রুপ জš§ নেয় এডিস মশা। এডিস মশা বৃদ্ধির ফলে ঝুঁকি বেড়ে চলছে ডেঙ্গুর কবলে পড়ার। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি, অনেকটাই সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু সারাদেশের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকাতে যেন ডেঙ্গুর ছড়াছড়ি। রীতিমতো ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে এবং সংক্রমিত হচ্ছে অনেক মানুষ। এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে যাচ্ছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বর হলেই নিজ দায়িত্বে ডেঙ্গু টেস্ট করে নেয়া বুদ্ধিমানের পরিচয় বহন করে।

দায়িত্ব জ্ঞানহীন আচরণে ডেকে আনতে পারে মহা বিপদ এবং একটা পরিবারে নেমে আসতে পারে আকস্মিক আঁধার। কারণ ডেঙ্গু জ্বরে খুব দ্রুত প্লাটিলেট মাত্রা কমতে শুরু করে, যা একজন সুস্থ মানুষের জন্য বিপদের কারণ। রক্তের প্লাটিলেটের স্বাভাবিক মাত্রা দেড় লাখ থেকে শুরু করে সাড়ে চার লাখ পর্যন্ত। যদি ১৫-৩০ হাজারে নেমে আসে খুব বিপজ্জনক, দ্রুত রক্ত দিতে হয়। এত নিচে আসার ফলে রোগী মারাও যেতে পারে। তাই অবহেলা না করে নিজ দায়িত্বে ডেঙ্গু নির্ণয় করতে হবে এবং সুস্থতার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

সবার ডেঙ্গু জ্বরের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং কিছু লক্ষণ জানা জরুরি। যে লক্ষণগুলো দেখা দিলে ধারণা করা যাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। যেমন: সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেয়ার পর আবারও জ্বর আসতে পারে। এর সঙ্গে শরীরে ব্যথা মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র‌্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।

তাই ডেঙ্গু সংক্রামিত হলে রোগীকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম দিতে হবে এবং বেশি করে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য ওষুধ হিসেবে কেবল প্যারাসিটামল সেবন করতে পারে। রোগীর শিরায় স্যালাইন দিতে হতে পারে। অবস্থা যদি খুব মারাত্মক রূপ ধারণ করে তবে অবহেলা না করে জরুরি ভিত্তিতে রোগীকে রক্ত দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে হলে কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও ননস্টেরয়েডাল প্রদাহপ্রশমী ওষুধ সেবন করা যাবে না, করলে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া তথ্য মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে ডেঙ্গু একটি বৈশ্বিক আপদে পরিণত হয়েছে। এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও অন্যান্য মহাদেশের ১১০টির অধিক দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়। প্রতি বছর পাঁচ থেকে ৫০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হয় এবং তাদের মাঝে দশ থেকে বিশ হাজারের মতো মারা যায়। ১৭৭৯ সালে ডেঙ্গুর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। বিংশ শতকের প্রথম ভাগে ডেঙ্গুর ভাইরাস উৎস ও সংক্রমণ বিশদভাবে জানা যায়। মশক নিধনই বর্তমানে ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। সরাসরি ডেঙ্গু ভাইরাসকে লক্ষ্য করে ওষুধ উদ্ভাবনের গবেষণা চলমান রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশটি অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগের একটি হিসেবে ডেঙ্গু চিহ্নিত করেছে।

ডেঙ্গ জ্বরের ক্ষেত্রে সচেতনতা বেশি কার্যকরী। নিয়ম মেনে থাকতে পারলেই দ্রুত সেরে ওঠা যায়। নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কিছু কাজ করা অধিক প্রয়োজন। বাড়ির আঙিনায় বা ঝোপ জঙ্গল পরিষ্কার রাখতে হবে যেন মশা সৃষ্টি না হয়। দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানাতে হবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে।

বাসায় পরিষ্কার জায়গা থাকলে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। ওয়াশরুম বা পানি সংযুক্ত জায়গা শুকনো রাখতে হবে কারণ পানি থেকে জš§ নিতে পারে এডিস মশা। তাই সচেতনতা রোধ করতে পারে ডেঙ্গু জ্বর।

জুবায়েদ মোস্তফা

শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়