ডেঙ্গু জ্বর

ডেঙ্গু জ্বর, যা ব্রেকবোন ফিভার নামেও পরিচিত। এটি সংক্রামক ট্রপিক্যাল ডিজিজ। ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে হয়। স্বল্প ক্ষেত্রে অসুখটি প্রাণঘাতী ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে পর্যবসিত হয়। ফলে রক্তপাত, রক্ত অণুচক্রিকার কম মাত্রা ও রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ কিংবা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে পরিণত হয়। এসব ক্ষেত্রে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কম থাকে।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ১৯৬০ সালের পর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রভাব। প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন লোক এতে আক্রান্ত হয়। ১৯৭৯ সালে জানা যায়, এটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ রোগ।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব অনেক আগে থেকে। প্রতি বর্ষায় কমবেশি ডেঙ্গুর প্রভাব দেখা যায়। এ বছরও রাজধানীতে বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় এর প্রকোপ বেশি। ঘনঘন বৃষ্টিপাতে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা বংশবিস্তার বেশি করে। শীত আসার আগ পর্যন্ত এই জ্বরের প্রাদুর্ভাব থাকে। তবে শীতে এডিস মশা তেমন একটা বংশবিস্তার করে না। ওই সময়ে ডেঙ্গু জ্বরে তেমন কেউ আক্রান্ত হয় না। এডিস মশা দ্বারা ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস ছড়ায়। চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাস রয়েছে: ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।

লক্ষণ

সাধারণত তীব্র জ্বরের পাশাপাশি শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এই জ্বর ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠে

রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায়

শরীরের হাত-পা ও অন্যান্য অংশ ঠাণ্ডা হয়ে যায়

প্রস্রাব কমে যায়

হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে

শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি এলে

জন্ডিস দেখা দিলে

হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়

মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়

জ্বর হওয়ার চার বা পাঁচ দিনের সময় সারা শরীরে লালচে দানা দেখা যায়

বমি বমি ভাব এমনকি বমি হতে পারে

রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে, রুচি কমে যায়

চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত থেকে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা হতে পারে।

চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসা যথেষ্ট। এই জ্বরে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী সাধারণত পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে, যাতে ডেঙ্গুজনিত কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়।

সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে

যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। মুখে খেতে না পারলে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে

জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। এছাড়া ভেজা কাপড় দিয়ে গা মোছাতে হবে।

প্রতিরোধ
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের মূলমন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ করা। এ ধরনের মশা যেন কামড়াতে না পারে সে ব্যবস্থা করা।

এডিশ মশা সাধারণত সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য যে কোনো সময়ও কামড়াতে পারে। তাই ঘরের দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে। দিনের বেলায় মশারি টানিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে

বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় প্রভৃতি স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে

এডিস মশা মূলত ডিম পাড়ে যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে। খেয়াল রাখতে হবে ঘরবাড়ি ও এর চারপাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ক্যান, টিনের কৌটা, মাটির পাত্র, বোতল, ফুলদানি, পরিত্যক্ত টায়ার ও নারকেলের খোলায় যেন পানি জমতে না পারে। এছাড়া গোসলখানার বালতি, ড্রাম, প্লাস্টিক ও সিমেন্টের ট্যাঙ্ক কিংবা মাটির গর্তে চার থেকে পাঁচ দিনের বেশি পানি জমিয়ে রাখা যাবে না

বাথরুম, বারান্দা, অ্যাকুয়ারিয়াম, ফ্রিজ ও এয়ারকন্ডিশনারের নিচেও যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে

যে শিশুরা স্কুলে যায়, তাদের হাফপ্যান্ট না পরিয়ে ফুলপ্যান্ট পরিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে

ইন্টারনেট অবলম্বনে শিপন আহমেদ

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০