ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করুন

চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে রাজধানীর চেয়ে রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল। এখন সব মিলিয়ে রাজধানীর বাইরে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীর চেয়ে বাইরে শুধু রোগী নয়, বাড়ছে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যাও।

দেশের সব ধরনের স্বাস্থ্যসুবিধার বেশিরভাগই ঢাকা মহানগরীকেন্দ্রিক। একটি তথ্যে বিষয়টি স্পষ্ট হবেÑগত ২১ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর সময়পর্বে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে; এ সময় রাজধানীর বাইরে মারা গেছেন ৮১ জন।

রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৮৬৮ জন। এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা টিআইবি ‘ডেঙ্গু সংকট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, ডেঙ্গু সংকট রাজনৈতিক গুরুত্ব পায়নি, দায় চাপানো হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর।

রাজধানীসহ দেশের ১০টি জেলার ওপরে করা গবেষণার ভিত্তিতে এ মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির গবেষকরা।

রাজনৈতিক ডামাডোলে ডেঙ্গু রাজনৈতিকভাবে যাথাযথ গুরুত্ব পায়নি; এটিই আমাদের ধারণা। দুঃখজনক হলো দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বরাবরই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা অস্বীকার করেছেন; আবার বিভ্রান্তিকর তথ্যও দিয়েছেন।

ব্যর্থতার দায়ভার জনগণের ওপর চাপানোর চেষ্টাও লক্ষণীয়। একজন নাগরিক নিজের আবাসস্থল ও এর আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে পারেন; কিন্তু এর বাইরের জায়গা চাইলেও তারা পরিচ্ছন্ন রাখতে পারেন না। কেননা এটি সামষ্টিক দায়িত্ব। স্থানীয় সরকার পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যথাযথ দায়িত্ব পালন করেনি বলেই ২০২৩ সালে সর্বাধিক ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০টি দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ব্রাজিল ছাড়া অন্য দেশের প্রায় সমপর্যায়ের হলেও  মৃত্যুর সংখ্যা ও হারের দিক থেকে বাংলাদেশ প্রথম।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার চেয়ে কার্যকর উপায় নেই। এই কাজটি নাগরিকরা ঠিকমতোই করেছে। কিন্তু ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশা কমানোর বিকল্প নেই। সে দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রবিশেষে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের। যেখানে  রাজধানীর সিটি করপোরেশন মশা নির্মূলের ওষুধ কিনে প্রতারিত হয়, সেখানে মফস্বলের অবস্থা হতে পারে; তা অনুধাবন করা যায়। নির্মাণাধীন স্থাপনা ও অবকাঠামো যেন এডিস মশার বংশবিস্তারের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। সুশাসন ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার না থাকায় জবাবদিহি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। মেয়ররা উন্নত দেশে গিয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন, ওই অভিজ্ঞতা নিজের অধিক্ষেত্রে কাজে লাগানোর প্রতিশ্রæতিও দেন; কিন্তু মশার বংশবিস্তার বন্ধ করা যায় না।  আমরা মনে করি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড ও আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসরণপূর্বক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগে মশা নিয়ন্ত্রণ এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত করা গেলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো সম্ভব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০