Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:56 pm

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিন

শীতেও থামছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম বলছে, মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১২ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছর মোট মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ৪৯৬ জনে দাঁড়িয়েছে।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এই রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশা নিধন জরুরি হলেও তাতে ঘাটতি রয়েছে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নাগরিক, অংশীজন ও বহুপক্ষীয় উদ্যোগ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ দুষ্কর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৌশলগত অগ্রাধিকার ঠিক করা, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দক্ষতা বাড়ানো, হাসপাতালে রোগী ব্যবস্থাপনায় সৃজনশীল উদ্যোগ, মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা চালু, মশারি বিতরণ, মশার ওপর নিয়মিত নজরদারি, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গোটা সরকারব্যবস্থার সম্পৃক্ততা এবং জোরালো তদারকি ও নিয়মিত কাজের মূল্যায়ন করা গেলে ডেঙ্গু  প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ডেঙ্গুর প্রধান কারণ এডিস মশার। এর বংশবিস্তার এবং  আবাসস্থল কমিয়ে আনাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। অথচ মশার বিস্তার রোধে আমরা কার্যকর ব্যবস্থাই নিতে পারিনি। এত সচেতনতামূলক বার্তা, প্রাণহানি, শিক্ষাসফর, অভিজ্ঞতা, নানা ওষুধ আমদানিÑ কিছুই কাজে আসছে না। মশানাশক ও লার্ভানাশক কার্যকারিতা হারিয়েছে। মশককর্মীরা যেভাবে কাজ করছেন, তাতে আবাসিক এলাকায় বরং মশা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে কলকাতা শহর। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র অভিজ্ঞতা অর্জন করতে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকে এসে আশার কথা শুনিয়েছেন অনেক। ২০১০ সাল থেকে এডিশ মশা নিধন ও বিস্তার রোধে আটঘাট বেঁধে নামে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন। উৎপত্তিস্থলে মশা নিধনে তারা বেশি জোর দেয়। জনগণকে সম্পৃক্ত করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মশা নিয়ন্ত্রণ কমিটি করে। ফগার মেশিন দিয়ে মশা না তাড়িয়ে উৎপত্তিস্থলেই মশাকে ধ্বংস ও বংশবিস্তার রোধ শুরু থেকেই এই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছে কলকাতা। করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিদের বলেছেন, ‘ফগার দিয়ে মশা তাড়ালে এক পাড়ার মশা আরেক পাড়ায় যায়। কাজের কাজ কিছুই হয় না।’

রোগী ধরে ধরে চিহ্নিত করতে পারলে ওই রোগীর আবাসস্থল এবং কাছাকাছি এলাকায় মশক নির্মূল করা গেলে সুফল মিলবে।

ডেঙ্গুর মতো ভয়াবহ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানের পাশাপাশি মানুষকে যে সম্পৃক্ত করতে হবে, তা রাজনৈতিক নেতাদের বুঝতে হবে। কলকাতায় বিশেষজ্ঞরা যেমনটা করতে চেয়েছেন, সেটা রাজনৈতিক নেতারা করতে দিয়েছেন; পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কলকাতার সাফল্যের কথা আমাদের রাজনীতিকরাও জানেন না, তা নয়। গত জুলাইয়ে ডিএনসিসি মেয়র একটি জাতীয় দৈনিককে বলেছেন, ‘কলকাতার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আমরা জেনেছি। আমরা সেখান থেকে বেশ কিছু বিষয় শিখেছি।’ প্রশ্ন উঠেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শিখে এসেছেন, কলকাতা থেকে অনেক কিছু জেনেছেন; কিন্তু কেন কাজে লাগাচ্ছেন না!

মশা নিয়ন্ত্রণ এখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কারণে ডেঙ্গু ইস্যু অনেকটা আলোচনার বাইরে চলে গেছে। আমরা আশা করি, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবে।