বাংলাদেশে বহু বছর ধরে ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ থাকলেও ২০২৩ সালে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে যায়। ওই বছরে আক্রান্তের হার যেমন বেড়েছে, তেমনি মৃতের সংখ্যা সর্বোচ্চ ছুঁয়েছে। ২০২৩ সালের আগের ২৩ বছরে দেশে ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ৮৬৮ জন। কিন্তু ২০২৩ সালেই মোট ১ হাজার ৬৯৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অর্থাৎ গত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, ২০২৩ সালে এক বছরেই তার চেয়ে বেশি মানুষ এই রোগে মারা গেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের এই পরিণতির পেছনে গত কয়েক বছর ধরে চলমান অপরিকল্পিত নগরায়ন, মশক নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা, স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থাসহ বেশ কিছু কারণ রয়েছে। অনেক বছর ধরেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মশার ওষুধ ছিটানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মতো নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা থাকলেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডেঙ্গু মশার বিস্তার।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ২১’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গত বুধবার তার আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১ জন। মৃতদের তিনজনই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বাসিন্দা।
ডেঙ্গু মূলত বর্ষাকালের রোগ। কারণ ওই সময় শহরের বিভিন্ন ভবন ও সড়কে পানি জমে থাকার কারণে মশা বংশ বিস্তারের সুযোগ পায়। কিন্তু এবার বর্ষা শুরুর আগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। বিষয়টি কোনোভাবেই সুখকর নয়। গত বছর যে হারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছিল, তাতে একপ্রকার মহামারি পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বতন্ত্রভাবে শুধু ডেঙ্গ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ওই হাসপাতালের ওয়ার্ড ছাপিয়ে বিভিন্ন বারান্দায়ও রোগীদের ঠাঁই দেয়া যাচ্ছিল না। চলতি বছর যেন সে রকম কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে আগে থেকেই পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক।
ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ কমানোর প্রধান উপায় হচ্ছে এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করা। এই বংশ বিস্তার রোধ করতে হলে কার্যকরভাবে ওষুধ ছিটাতে হবে। কিন্তু যে ওষুধ ছিটানো হয়, সেগুলো মশা নিধনে কার্যকর কিনা, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা আবশ্যক। সে জন্য ইনকিউবেটরে মশার ওপর মশা নিধন ওষুধ প্রয়োগ করে সেটির কার্যকরিতা নিশ্চিত হতে হবে। বর্তমানে এমন ব্যবস্থা চালু নেই। ফলে ওষুধের কার্যকারিতা বোঝা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে মশা নিধনে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে এমন ওষুধ প্রয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজন পদক্ষেপ নেবে বলেই প্রত্যাশা।