ডেঙ্গু হলেই মৃত্যু নয় দরকার সচেতনতা

সাধারণত ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর ৮০ শতাংশ উপসর্গবিহীন থাকেন অথবা সাধারণ জ্বরের মতো সামান্য উপসর্গ থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো হয় খুবই সাধারণ। যেমন সাধারণ সর্দি, বমি ও ডায়রিয়াÑএসব হতে পারে। সাধারণত বড়দের চেয়ে ছোটদের উপসর্গের তীব্রতা কম হয়, তবে জটিলতা শিশুদেরই বেশি হয়। ডেঙ্গুতে জ্বর ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। বিরামহীন মাথাব্যথা, হাড়, হাড়ের জোড় ও পেশিতে তীব্র ব্যথা, বমি ভাব, বমি হওয়া, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, সারা শরীরে ফুসকুড়ি, চোখের পেছনে ব্যথা হতে পারে। ডেঙ্গু যদি প্রথমবার আক্রান্ত করে এবং এটি যদি তরুণ বয়সী বা শিশুদের হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ থাকে না। জ্বরও থাকে না, এ রকমও হতে পারে।

পরিস্থিতি জটিল হলে কারও কারও মুখ ও নাকের মিউকাস মেমব্রেন থেকে অল্প রক্তপাতও হতে পারে। অল্পসংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। অনেকের প্রবল জ্বর হয় এবং সাধারণত এক থেকে দুই দিন স্থায়ী হয়। এ পর্যায়ে প্রচুর পরিমাণে তরল বুক ও পেটের অভ্যন্তরে জমা হয়। এর ফলে রক্তপ্রবাহে তরলের পরিমাণ কমে যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহ হ্রাস পায়। এ পর্যায়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকলতা এবং প্রবল রক্তপাত হয় দেখা দিতে পারে। ডেঙ্গুর ৫ শতাংশের কম ক্ষেত্রে শক (ডেঙ্গু শক সিনড্রোম) এবং হেমারেজ (ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার) ঘটে। তবে যাদের আগেই ডেঙ্গু ভাইরাসের অন্যান্য স্টেরিওটাইপের সংক্রমণ ঘটেছে (সেকেন্ডারি ইনফেকশন), তারা বিশেষ বিপদের মধ্যে রয়েছেন। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে, যেমন ফুসফুস ও পর্দার মাঝে (প্লুরাল ইফিউশন) কিংবা পেটে সামান্য পরিমাণ পানি জমতে পারে। তবে বেশি প্লাজমা লিকেজ হলে রক্তচাপ কমে যায় ও রোগী শকে চলে যায়। বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমে যেতে পারে ও একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকেজো হতে পারে। ফুসফুস, কিডনি, হƒদ্যন্ত্র আক্রান্ত হতে পারে। হার্ট ফেইলিউর বা কিডনি ফেইলিউর হলে বুকে পানি জমা, শ্বাসকষ্ট, অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়া ইত্যাদি জটিলতায় পড়তে পারেন রোগী।

এরপর আরোগ্য পর্যায়ে বেরিয়ে যাওয়া তরল রক্তপ্রবাহে ফেরত আসে। ঠিকঠাক চিকিৎসায় খুব দ্রুতই রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। এই উন্নতি হয় চমকে দেয়ার মতো। কিন্তু এ সময় চুলকানি ও হƒৎস্পন্দনের গতি ধীর হতে পারে। এ পর্যায়ে তরলের অতিপ্রবাহও হতে পারে। যদি এতে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়, তাহলে সচেতনতার মাত্রা হ্রাস পেতে পারে। ক্লান্তির অনুভূতি অনেক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।

ডা. মো. আজিজুর রহমান

বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, লালবাগ, ঢাকা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০