নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের (জনমিতিক লভ্যাংশ) সুফল পেতে আরও প্রস্তুতি দরকার। বিশেষ করে শিক্ষাব্যবস্থার দিকে আরও নজর দেওয়া প্রয়োজন। সাধারণ শিক্ষার পরিবর্তে ভোকেশনাল ও টেকনিক্যাল শিক্ষার দিকে তরুণদের আকৃষ্ট করা এবং যুগের চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা জরুরি।
অর্থনৈতিক বিষয়ের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত মোয়াজ্জেম হোসেন স্মারক বক্তৃতায় গতকাল তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল। এতে সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের যুগ্ম সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, ইআরএফের সাবেক সভাপতি জাকারিয়া কাজল, সাবেক সভাপতি সুলতান মাহমুদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বক্তব্য রাখেন। ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
উল্লেখ্য, মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন দেশের প্রথম বিজনেস নিউজপেপার ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক। তিনি ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের প্রথম সভাপতি। ২০১৮ সালের ১ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ড. মসিউর রহমান বলেন, বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড শব্দযুগল বেশ আলোচিত বিষয়। যে কোনো প্রসঙ্গে এটি তুলে আনেন অনেকে। কিন্তু ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুফল পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি দরকার। সে প্রস্তুতির কিছু ঘাটতি আছে বলেই মনে হয়। এখানে চাহিদার আলোকে শিক্ষা দেওয়া হয় না। আমাদের মূলত মিড লেভেল ও জুনিয়র লেভেলে কাজের উপযোগী লোক বেশি প্রয়োজন। আর এই জনবল তৈরি হতে পারে ভোকেশনাল ও টেকনিক্যাল শিক্ষায়। কিন্তু এখানে সবাই সন্তানকে গ্র্যাজুয়েট বানাতে চান। সবাই বিবিএ পড়তে চান। কিন্তু কোনো বিষয়ের গভীরে যেতে চান না কেউ।
তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শুধু বিবিএ পড়–য়া শিক্ষার্থীর ছড়াছড়ি। কিন্তু সে তুলনায় এমবিএ পড়–য়ার সংখ্যা নগণ্য। আবার যারা পড়েন, তাদের মধ্যে ইভিনিং এমবিএ, এক্সিকিউটিভ এমবিএ পড়ার দিকেই ঝোঁক বেশি। রেগুলার এমবিএর শিক্ষার্থী সে তুলনায় অনেক কম।
ড. মসিউর রহমান আমাদের অর্থনীতির কিছু প্রবণতা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীরা শিল্পের জন্য সব সময় সুরক্ষা চান। তারা নানা ধরনের প্রণোদনা দাবি করেন। এর কিছু যৌক্তিকতা হয়তো আছে; কিন্তু বেশিরভাগই সেভাবে যৌক্তিক নয়। নতুন কোনো শিল্প খাত হলে তার জন্য কিছুটা প্রটেকশন দরকার। কারণ, শুরুতেই বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা কঠিন। কিন্তু সুরক্ষা দেওয়ার পরও যদি দক্ষতা অর্জিত না হয়, তাদের উৎপাদিত পণ্য যদি বছরের পর বছর বিদেশি পণ্যের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হয়, তাহলে ভোক্তা ও দেশের মানুষের জন্য তা কষ্টকর।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির নানা পরিবর্তন ও সমস্যা এলেই আমাদের উদ্যোক্তারা প্রণোদনা দাবি করেন। কিন্তু ৪০ বছর পরও যদি তারা সামান্য ঝাঁকুনি সামলাতে না পারেন, তাহলে কোনোদিনই তারা ব্যবসা ধরে রাখার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন না। ড. মসিউর রহমান বলেন, আমাদের বিনিয়োগের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ, বিনিয়োগ বাড়লে উৎপাদন বাড়ে, সে সঙ্গে সরকারের রাজস্বও বাড়ে। এছাড়া রফতানি বৃদ্ধির কারণে বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসে। তাতে রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরতা একটু কমে।
তিনি বলেন, রেমিট্যান্সের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, সেটি আমাদের এখতিয়ারে থাকে না, অন্য দেশের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তেলের দামের ওঠানামা, ইরান ও অন্যান্য ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা রেমিট্যান্সের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করে।