Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 1:46 pm

প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি বাণিজ্য অংশীদারদের

শেয়ার বিজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটের মাধ্যমে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে শুল্কারোপের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধান বাণিজ্য অংশীদাররা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এতে  বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কায় গতকাল শুক্রবার এশিয়ার বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। খবর বিবিসি।

ট্রাম্প সম্প্রতি এক টুইটে বলেছেন, ‘অন্যায় বাণিজ্য ও খারাপ নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ তিনি জানান, নিজেদের শিল্পের সুরক্ষার জন্য ইস্পাত আমদানিতে ২৫ শতাংশ  ও আলুমিনিয়াম আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্কারোপের পরিকল্পনা হচ্ছে।

ট্রাম্পের এ ঘোষণার পর কানাডা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, চীনসহ প্রধান অংশীদাররা নতুন শুল্কারোপের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই নতুন এ শুল্কারোপের নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এতে মার্কিন কর্মসংস্থানের সুরক্ষা থাকবে না এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে, যার ফল ভোগ করতে হবে ভোক্তাদের।

এদিকে এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কায় এশিয়ার পুঁজিাবাজারে প্রভাব পড়তে দেখা গেছে। গতকাল লেনদেনের শুরুতে এশিয়ার বড় পুঁজিবাজার জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক পয়েন্ট দুই শতাংশ কমে যায়। এর মধ্যে জাপানের গাড়িনির্মাতা কোম্পানি টয়োটার শেয়ার পড়ে যায় দুই শতাংশের বেশি এবং নিপ্পন স্টিলের শেয়ার পড়ে চার শতাংশের বেশি।

টয়োটা জানিয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত গাড়িনির্মাতা, সরবরাহকারী ও ভোক্তাদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’

অন্য বাজারের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ইস্পাত প্রস্তুতকারক পসকোর শেয়ারদর সাড়ে তিন শতাংশেরও বেশি কমেছে। এতে দেশটির পুঁজিাবাজার সূচক কোসপির পয়েন্ট দেড় শতাংশ কমে যায়।

হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক কমেছে এক দশমিক সাত শতাংশ, অন্যদিকে সাংহাই কম্পোজিট কমেছে দশমিক সাত শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ার প্রধান পুঁজিবাজার সূচক এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০-এর পয়েন্ট এক শতাংশ কমে যায়। মাইনিং জায়ান্ট বিলিটনের শেয়ার কমে যায় প্রায় দেড় শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ ইস্পাত রফতানি করে, তার চারগুণ বিশ্বের প্রায় ১০০ দেশ থেকে আমদানি করে। দেশটির জ্বালানি বিভাগ বলছে, ২০০৮ সালে অর্থনৈতিক মন্দার পর ইস্পাতশিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে এটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম গতিতে এগুচ্ছে। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১১২ মিলিয়ন টন ইস্পাত উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৬ সালে এসে তা ৮৬ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ২০০০ সালে এ খাতে দেশটিতে এক লাখ ৩৫ হাজার কর্মী কাজ করত। ২০১৬ সালে এসে তা ৮৩ হাজার ছয়শ’তে চলে এসেছে।

গত বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন ১৯৬২ সালের আইনের আওতায় এ শিল্পের সুরক্ষায় বাণিজ্য বিভাগকে তদন্দের নির্দেশ দেন। গত মাসে বাণিজ্য বিভাগ ওই তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করেছ। এতে শুল্কারোপের সুপারিশ করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতেই ট্রাম্প টুইটে তার পরিকল্পনার ঘোষণা দিলেন।

এদিকে ইউরোপীয় কমিশন প্রেসিডেন্ট জ্যা ক্লোদ জানকার বলেছেন, ‘নতুন এ শুল্কারোপে ইউরোপের কয়েক হাজার চাকরি ঝুঁকিতে পড়বে।’ তাই নিজেদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ইস্পাত ও অ্যালমুনিয়াম সরবরাহকারী কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রীও বলেছেন, ‘কোনো শুল্ক গ্রহণযোগ্য নয়।’ এছাড়া ব্রাজিল, জার্মানি, ও চীনের কর্মকর্তারাও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

এর আগে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষায় চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা সোলার প্যানেল এবং ওয়াশিং মেশিনের ওপরও নতুন করে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নে এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বড় আকারের ওয়াশিং মেশিনে আগামী তিন বছর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপিত হবে। আর সোলার প্যানেলে চার বছর ৩০ শতাংশ শুল্ক নেওয়া হবে। মূলত বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় নেয়া সাম্প্রতিকতম উদ্যোগ এটি।

বিভিন্ন বাণিজ্য ইস্যু নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ দীর্ঘদিনের। তার ওপর নতুন এ শুল্কারোপের ঘোষণায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাণিজ্য উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ লিউ হি ওয়াশিংটন যাবেন।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা লিউয়ের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা রয়েছে চলতি সপ্তাহে। তিনি বিশ্বের বৃহৎ দুই অর্থনীতির দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন।