বৈষম্যমূলক ড্যাপ বাস্তবায়ন স্থগিত করে সংস্কারের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের দাবি জানিয়েছে স্থপতিদের সংগঠন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট (বাস্থই)। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ড্যাপ স্থগিতকরণেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বাস্থই নেতারা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-৩৫) ড্যাপ বাস্তবায়ন স্থগিত করে এর আইনি এবং অন্যান্য অসংগতি দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করার দাবি জানান।
বাস্থইসহ অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠন এ পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রক্রিয়া নগর পরিকল্পনা-সংক্রান্ত দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে আসছে। এর আগে ঢাকা মহানগরীর পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রথম পর্যায়ে প্রস্তাবিত নগর অঞ্চলের ‘কাঠামো পরিকল্পনা’ গ্যাজেটের মাধ্যমে অনুমোদন করার পর নগরের বিভিন্ন এলাকার জন্য ‘আর্বান এরিয়া প্ল্যান’ এবং পরিশেষে ‘ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান’ গ্যাজেটের মাধ্যমে অনুমোদন করা হয়। ড্যাপ (২০২২-৩৫) প্রণয়নের আগে ‘ঢাকা কাঠামো পরিকল্পনা’ ২০১৬ সালে প্রণয়ন করা হলেও, তা গ্যাজেটভুক্ত না করে আইনি ব্যত্যয় ঘটিয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষেপণ করে ২০২২ সালে এই বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-৩৫) গ্যাজেট করা হয়। কাজেই এই বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-৩৫) বেআইনি প্রক্রিয়ায় প্রণীত হয়েছে।
বন্যাপ্রবাহ অঞ্চলের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে এবং কৃষিজমিতে অবাধ নগরায়ণের সুযোগ দিয়ে এ পরিকল্পনা মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এই বক্তব্য কেবল বাস্থইয়ের নয়, বরং পরিবেশবিদ, আইনজীবী এবং অন্যান্য পেশাজীবী ও বিশিষ্টজনদের। এর আগে ২০২২ সালে নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) বলেছে, রাজধানীবাসীর একটি সমস্যার সমাধানও রাজউক দিতে পারেনি। তাদের প্রধান কাজ উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণে তারা ব্যর্থ হয়েছে। রাজউকের সক্ষমতা বাড়াতে পেশাজীবীদের দিয়ে রাজউক বোর্ড গঠনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন পারিকল্পনাবিদরা। বলেছেন, সংশোধিত ড্যাপ ভালো হলেও তা বাস্তবায়ন করতে হলে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সমন্বয় করতে হবে।
ড্যাপের সাধারণ উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনা বা ডিএমডিপির কাঠামো পরিকল্পনা এবং নগর অঞ্চল পরিকল্পনার নীতি ও সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা। উদ্দেশ্যসাধনে রাজউক কতটা সফল হয়েছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও রাজধানীবাসীর অভিজ্ঞতা ইতিবাচক নয়। এখনও সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীর স্থলভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা হাঁটুপানির নিচে চলে যায়। নগরবাসী সংস্থাটির কার্যক্রমে আস্থাশীল নয়। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে বিরক্তি প্রকাশ করা ছাড়া সাধারণ মানুষ ভোগান্তি লাঘবে কিছু করতেও পারে না।
একটি নগরের যথাযথ স্থানিক বিন্যাস নিশ্চিতে নগরবিষয়ক নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে নগর নকশাবিদ তথা স্থপতিদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অথচ নীতিনির্ধারকরা তাদের পরামর্শ উপেক্ষা করছেন; এটি দুঃখজনক। অংশীজনদের পরামর্শ মেনে ড্যাপ
বাস্তবায়ন স্থগিত করে এর আইনি এবং অন্যান্য অসংগতি দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্কারের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলেই প্রত্যাশা।