রিয়াসত করিম পেশায় একজন উন্নয়নকর্মী হলেও কৃষিকাজ তার নেশা। তিনি উত্তরবঙ্গের অনুর্বর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে নানা ধরনের গাছ লাগিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ভিনদেশি ফল ড্রাগন চাষ করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন। তার সঙ্গে আলাপচারিতার কিছু অংশ তুলে ধরেছেন শিপন আহমেদ
শেয়ার বিজ: আপনার পেশা ও লেখাপড়া সম্পর্কে জানতে চাই…
রিয়াসত করিম: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে ‘নেটজ বাংলাদেশ’ নামে জার্মানিভিত্তিক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত।
শেয়ার বিজ: ড্রাগন চাষে আগ্রহী হলেন কেন?
রিয়াসত করিম: কৃষিকাজ আমার নেশা। তাই পরীক্ষামূলকভাবে অনেক অপ্রচলিত ও প্রচলিত ফল, শস্য ও সবজির চাষ করি। কোনোটাতে সফল হয়েছি, আবার কোনোটাতে লোকসান হয়েছে। তবু উদ্যম হারাইনি। প্রকৃতির প্রতি অসীম ভালোবাসা থেকে এই নেশায় জড়িয়েছি। বর্তমানে আমার বিভিন্ন ধরনের ফল ও কাঠগাছের বাগান রয়েছে। আমি অনুর্বর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে নানা ধরনের গাছ রোপণ করেছি। নতুন কিছু চাষাবাদের প্রতি আমার বরাবরই আগ্রহ রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচিত এক কর্মকর্তা আমাকে বাড়িতে লাগানোর জন্য তিন-চারটি ড্রাগন চারা দিয়েছিলেন। পরে ইন্টারনেটে ড্রাগন ফল সম্পর্কে জেনে এটি চাষে আগ্রহী হই।
শেয়ার বিজ: আগে এখানে কী চাষ করতেন?
রিয়াসত করিম: এসব জমিতে কোনো ফসলই ভালো হতো না, কারণ জমিতে প্রচুর ঘাস জন্মে। অধিকাংশ সময় পরিত্যক্ত কিংবা অনাবাদি থাকত। এজন্য এটিকে ড্রাগন চাষের জন্য নির্বাচন করি।
শেয়ার বিজ: কোন কোন জাতের ফল চাষ করেন?
রিয়াসত করিম: বর্তমানে আম, লিচু, ড্রাগন, মালটা, পেয়ারা, লটকন, প্যাশন (ট্যাং), গ্রাভিওলা প্রভৃতি গাছ রয়েছে।
শেয়ার বিজ: ড্রাগন চাষের জন্য বাগানের কতটুকু জায়গা লেগেছে?
রিয়াসত করিম: প্রথম দেড় বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করি। দুই বছর পর এখন বাগানের আয়তন প্রায় সাড়ে ১০ বিঘায় দাঁড়িয়েছে।
শেয়ার বিজ: খরচ কেমন? এ কাজের সুবিধা বা অসুবিধা?
রিয়াসত করিম: ড্রাগন চাষের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। এক বিঘা জমিতে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। চারা রোপণের সময় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ টাকা ব্যয় হয়। ড্রাগন চাষের সুবিধা হচ্ছে, সব ধরনের উঁচু মাটিতে এই ফলের চাষ করা যায়। তবে পাহাড়ের মাটি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। প্রথম দিকে ফলন কম হলেও প্রতি বছর উৎপাদন বাড়ে। গাছে পাকা অবস্থায় ফল সাত থেকে ১০ দিন রাখা যায়। গাছ থেকে ফল সংগ্রহের পর প্রায় ১৫ দিন এবং ফ্রিজে ২৫ দিন পর্যন্ত রাখা যায়। এর অসুবিধা হচ্ছে বেশি পানি সহ্য করতে পারে না।
শেয়ার বিজ: আয় কেমন হচ্ছে?
রিয়াসত করিম: প্রথম এক বছর বাগান থেকে প্রায় তিন লাখ টাকার ফল পেয়েছি। ফলের দাম স্থানীয়ভাবে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকায় বিক্রি করা যায়।
শেয়ার বিজ: কোথায় বিক্রি করেন?
রিয়াসত করিম: স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। এছাড়া আশপাশের জেলা শহরেও বিক্রি করে থাকি।
শেয়ার বিজ: আমাদের দেশে ফলটি চাষের সম্ভাবনা কেমন?
রিয়াসত করিম: দেশে ড্রাগন চাষের ভবিষ্যৎ ভালো। আবহাওয়া ও মাটি এই ফল চাষের উপযোগী। এছাড়া ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালায়েশিয়া, চীন প্রভৃতি দেশে ড্রাগনের চাষ হচ্ছে।
শেয়ার বিজ: ড্রাগন চাষে আগ্রহী চাষিদের উদ্দেশে কিছু বলুন।
রিয়াসত করিম: এটি একটি লাভজনক ফসল। ড্রাগন ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে এ দেশে। ড্রাগন চাষের জন্য তেমন কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। কোনো অভিজ্ঞ ড্রাগনচাষি কিংবা জেলা কৃষি অধিদফতর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষ করতে পারেন। ভবিষ্যৎ বিবেচনায় পরিশ্রম করে যেতে হবে। সফল হতে হলে অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে।