ড্রাগন ফল চাষে ময়মনসিংহের রফিউল কবিরের সাফল্য

রবিউল আউয়াল রবি, ময়মনসিংহ: বাড়ির আঙিনার চারদিকে সবুজের সমারোহ। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগন ফলের গাছ। সবুজ গাছে শোভা পাচ্ছে লাল আর সবুজ ফল। স্বপ্নিল পরিপাটি এ বাগানটি গড়ে তুলেছেন ময়মনসিংহের নান্দাইলের রফিউল কবির মোহন। নিজ বাড়ির অনাবাদি জমিতে বিদেশি ফলের চাষ করে সফলতা দেখিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার বাগানে ৩০০ খুঁটিতে প্রায় এক হাজার ২০০ ড্রাগন গাছ রয়েছে। ড্রাগন একটি বিদেশি প্রজাতির সুস্বাদু রঙিন ফল হলেও বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এ ফলের চাষ ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। প্রথম দিকে এ সুস্বাদু ফলকে জনসাধারণ বিদেশি ফল মনে করলেও এখন এটি একটি দেশি ফল হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছে। ফলটি এখন বাংলাদেশে চাষ হলেও মূলত আমেরিকার জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর ফল এটি। ড্রাগন ফল এক ধরনের ফণীমনসা প্রজাতির ফল। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপি রঙের ড্রাগন ফলের দাম বেশি হলেও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা চমকে ওঠার মতো।

ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল পৌর শহরের কাটলিপাড়া এলাকার ড্রাগন ফল চাষি মোহন। ২০১৬ সালের দিকে মাত্র আড়াই শতক জমিতে সাতটি ড্রাগনের চারা লাগিয়ে তার যাত্রা শুরু। সাত বছরের ব্যবধানে এবার তার ৩০ শতাংশ জমিতে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার ফল বিক্রি করেছেন। এই ড্রাগন চাষেই নিজে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজের উপজেলায় ড্রাগন চাষের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখছেন মোহন।

রফিউল কবির মোহন বলেন, সম্পূর্ণ সখের বসেই আমি নিজের বাড়ির আঙিনায় মাত্র সাতটি ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করি। সে বছর ফলন ভালো হওয়ায় আমার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এরপর ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরীক্ষামূলকভাবে শুধু পিংক জাতের মালয়েশিয়ান বাউ ড্রাগন-১, ২ ও ৩ চাষ শুরু করি। ক্রমান্বয়ে লাভের মুখ দেখায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করি।

মোহন জানান, ড্রাগনের গাছ সোজা রাখার জন্য জমিতে পিলার স্থাপন করা হয়। জমিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্ব বজায় রেখে জমিজুড়ে পিলার স্থাপন করে প্রত্যেক পিলারের মাথায় একটি করে পরিত্যক্ত ইজিবাইকের ট্রায়ার বেঁধে দেয়া হয়। পিলারের পাশে ড্রাগন চারা রোপণ করা হয়। বাগানে ক্যাকটাস গাছের মতো দেখতে ড্রাগনের গাছগুলো বেড়ে এরই মধ্যে সিমেন্টের খুঁটির মাথার চারপাশে ছড়িয়ে গেছে। ড্রাগন চাষের জন্য আবহাওয়া অনুক‚লে থাকার কারণে এরই মধ্যে ড্রাগনের চারাগুলো বেশ পরিপক্বও হয়ে উঠেছে।

মোহনের ক্ষেতের এক একটি ড্রাগন ফল ৩০০-৭০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের হয়। বাগান থেকে প্রতি কেজি ড্রাগন তিনি ৪৫০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা আসেন তার বাগান থেকে ড্রাগন ফল কিনতে। গত বছর ফল বিক্রি করে প্রায় দেড় লাখ টাকার বেশি আয় করেছেন তিনি। এ বছর তার চেয়ে অনেক বেশি আয় হবে বলে জানান তিনি।

বছরে কয়বার ফল পাওয়া যায়Ñএমন প্রশ্নের জবাবে রফিউল কবির বলেন, শীত মৌসুমে প্রায় ছয় মাস ছাড়া বছরের বাকি ছয় মাস ড্রাগনের ফলন অব্যাহত থাকে। সাত দিন পরপর ফল তোলা যায়।

সফল এ ড্রাগন চাষি জানান, নান্দাইল উপজেলায় তিনিই প্রথম ড্রাগন চাষ শুরু করেন। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই ড্রাগন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মাসে এখন সব মিলিয়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারছেন। তবে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা নিয়ে পড়তে হয় সমস্যায়।

তিনি বলেন, সরকার যদি আমাদের এই ড্রাগনফল বাজারজাত করা সহজ করে দিত, তবে অনেকেই ড্রাগন চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠত। আর আমরা চাষিরা লাভবান হতাম।

তিনি আরও বলেন, আমার দেখাদেখি এলাকার শিক্ষিত যুবকরা ড্রাগনের বাগান করেছে। তাদের বাগানেও লাভ হচ্ছে। তারা চাকরির পেছনে না দৌড়িয়ে অনেকে আমার কাছে আসছে বাগান তৈরির পরামর্শের জন্য।

চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মোহন বলেন, ‘ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সারের ব্যবহার মোটেও উচিত নয়। সম্পূর্ণ জৈব সার ব্যবহার করেই এ ফল উৎপন্ন করতে হবে। শুধু নিয়মিতভাবে পরিচর্যা করতে পারলেই ড্রাগনের আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, ড্রাগনের চারটি জাত রয়েছে। এগুলো হলো হলুদ, সাদা, গোলাপি, ও পিংক। তবে পিংক জাতের ড্রাগন ফল দেখতে সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। একবার গাছের চারা লাগালে বছরে আট মাস ফল হার্ভেস্ট করা যায়। একটি গাছ থেকে এক মণ ফল আহরণ করা সম্ভব এবং ২০ বছর ধরে ফল আহরণ করা যায়। তবে শীতকালে প্রচণ্ড শীতে ফল উৎপাদন ব্যাহত হয়। তাই গাছের ওপর লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়।

নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান শেয়ার বিজকে জানান, পুষ্টিগুণ, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্যাকটাস-জাতীয় গাছ হওয়ায় রোগবালাইও কম। তাই চাষিরা সহজে এই ফল চাষ করতে পারে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০