Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 2:32 pm

ড. ইউনূসের মানি লন্ডারিং মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ, আদেশ ১২ জুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১২ জুন ধার্য করেছেন আদালত।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন গতকাল রোববার এ আদেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন।

গতকাল শুনানির শুরুতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল ইউনূসসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। পরে ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেন। একই সঙ্গে কেন তিনি অব্যাহতি পাবেন, সেই যুক্তি তুলে ধরেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত অভিযোগ গঠন বিষয় আদেশের জন্য দিন ঠিক করেন।

শুনানির শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল ইউনূসসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। পরে ইউনূসের আইনজীবী মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেন। একই সঙ্গে কেন তিনি অব্যাহতি পাবেন, সেই যুক্তি তুলে ধরেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত অভিযোগ গঠন বিষয় আদেশের জন্য দিন ঠিক করেন।

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।

ড. ইউনূস ছাড়া অভিযোগপত্রে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান; পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম এবং এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ; গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান,

শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মাইনুল ইসলাম এবং জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসানকে আসামি করা হয়।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে কামরুল হাসানের নাম তদন্তের পর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অপর ব্যক্তিদের নাম এজাহারে ছিল। দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে গত বছরের ৩০ মে মামলাটি করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ।

দুদক বলেছে, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলামসহ প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৮ মে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয় বলে জানানো হয়। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনার লভ্যাংশ বিতরণে শ্রমিক ইউনিয়ন ও গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে একই বছরের ২৭ এপ্রিল একটি চুক্তি সই হয়েছিল। চুক্তিতে ৮ মে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে বলে দেখানো হয়, যা বাস্তবে অসম্ভব। কাগজপত্র নকল করে এটা করা হয়েছে।

দুদক আরও বলেছে, চুক্তি অনুযায়ী এবং ১০৮তম বোর্ড সভার (গ্রামীণ টেলিকম) সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২২ সালের ১০ মে গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৪৩৭ কোটি এক লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। কর্মচারীদের লভ্যাংশের টাকা বিতরণ না করে তাদের না জানিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অবশ্য ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কর্মীরা লভ্যাংশের ভাগ বাবদ পাওনা চেয়ে আদালতে গেলে তাদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা হয়। এর ভিত্তিতে আইনজীবীদের খরচ বাবদ কর্মীরা ওই ২৫ কোটি টাকা অগ্রিম চেয়েছিলেন। সেটিই দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কর্মীদের লিখিত সম্মতি আছে।

এই আইনজীবী আরও বলেন, কর্মীরা ব্যাংক হিসাব খুলতে দেরি করায় চুক্তিতে সেই জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছিল। পরে দুই পক্ষ সেখানে ব্যাংক হিসাব নম্বর বসায়। সেটি সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছে।

লভ্যাংশ বাবদ পাওনা টাকা চেয়ে গ্রামীণ টেলিকমের ১৭৬ কর্মী শতাধিক মামলা করেছিলেন। তারা হাইকোর্টেও গিয়েছিলেন। পরে তাদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা হয়। ইউনূসের আইনজীবীরা বলছেন, সমঝোতার মাধ্যমে পাওনা পেয়ে কর্মীরা ২০২২ সালের মে মাসে মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন। পরে পাওনা পরিশোধের বিষয়টিকেই অর্থ আত্মসাৎ ধরে দুদক মামলা করে।

সরকারের নির্দেশে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর দুদকে চিঠি দিয়েছে বলে উল্লেখ করে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এটি তারা পারে না। আর ড. ইউনূস যখন এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন, তখন তড়িঘড়ি দুদক তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে। এর মাধ্যমে তাকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে।

এদিকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনকে ১ জানুয়ারি ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন শ্রম আদালত। সেই সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূসসহ চারজনের করা আপিল ২৮ জানুয়ারি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল।