ঢাকার পানি, বাতাস ও শব্দদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পরিবেশের অস্বাভাবিক দূষণে বাড়ছে সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ। বর্তমানে ঢাকা দূষণের নগরীতে পরিণত হয়েছে এবং হারাচ্ছে বাসযোগ্যতা। শহরের রাস্তা দিয়ে চলাচল করার সময় ওপরে কনস্ট্রাকশনের কাজ নিচে ইলেকট্রিসিটির তার থেকে শুরু বিভিন্ন লাইনের তার। রাস্তার দুপাশে রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরি, সেইসঙ্গে অকল্পিত অবকাঠামো ও গ্যাসলাইন। ফলে ঢাকা হয়ে উঠছে বসবাসের এক অযোগ্য শহর। বিশ্বের ‘বসবাসের অযোগ্য’ শহরগুলোর অন্যতম হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে ঢাকা।
বর্তমান সময়ে ঢাকার তাপমাত্রা অসহনীয় সেইসঙ্গে বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। যেভাবে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনায় পরিণত হচ্ছে এই শহর, তাতে এখানে টিকে থাকাই অস্বাভাবিক। রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় নির্মাণাধীন বহুতল ‘সৈনিক ভবনের’ দেয়াল ধসে আহত হয় শিশু সুরাইয়া। গত সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দক্ষিণখান কাজীবাড়ী রোডের ২৫১ গাওয়াইর নির্মাণাধীন ১৪তলা ভবনের ১১তলার দেয়ালের একটি অংশ ধসে ঘরের চালের ওপরে পড়ে। এতেই গুরুতর আহত হন বাবা ও মেয়ে। তবে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই নিরাপত্তার বিষয়টি বলা হচ্ছিল। কিন্তু ভবন কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি। ঢাকা শহরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ওপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নগরীতে গড়ে ওঠা অবকাঠামোর ৭৩ শতাংশই পুরোপুরি অপরিকল্পিত, যার কারণে প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ড ও ভবন ধসে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায়।
ঢাকার পরিবেশের মারাত্মক সমস্যাগুলোর অন্যতম বায়ুদূষণ। অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা স্থাপনের ফলে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ ক্রমাগত বাড়ছে। বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেন, পৃথিবীর বড় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার বাতাসে সবচেয়ে বেশি মিশছে সিসা। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় যানবাহনগুলো প্রতিদিন ১০০ কেজি সিসা ১ দশমিক ৫ টন সালফার-ডাইঅক্সাইড, ৬০ টন কার্বন মনোঅক্সাইড নির্গত করে। এসব উপাদান ক্রমাগত বাতাসের সঙ্গে মিশছে। সেই বাতাস আমাদের নিঃশ্বাসের সঙ্গে মিশে দেহের ভেতরে প্রবেশ করে যক্ষ্মা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, হাঁপানি প্রভৃতি মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করে।
ঢাকা শহরের আরেকটি বড় সমস্যা হলো তীব্র যানজট। এই যানজট রাজধানী শহরের অতিপরিচিত দৃশ্য, যা নাগরিক জীবনের জন্য এক ভোগান্তি। গবেষণায় দেখা গেছে, যানজটের কারণে রাজধানীতে পরিবহন প্রবেশ করতে না পারায় প্রতিদিন বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আয় নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টাÑএই ১২ ঘণ্টায় রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহনকে যানজটের কারণে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। ঢাকায় এখন সুশাসন, সবুজায়ন বৃদ্ধি এবং প্রকৃতিভিত্তিক পরিকল্পনার কথা ভাবা উচিত।
ঢাকা শহরকে সুন্দর শহরে পরিণত করার জন্য সবুজের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি এলাকায় থাকতে হবে খেলার মাঠ, থাকতে হবে জলাশয়, থাকতে হবে পার্ক। নগরের প্রতিটি ভবন রাজউকের বিধিমালা মেনে তৈরি করতে হবে।
সাকিবুল হাছান
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ