শহর হিসেবে ঢাকার সমৃদ্ধ অতীত রয়েছে। ৪০০ বছরের পুরোনো এ শহর মোগল আমল থেকে এ পর্যন্ত কয়েকবার রাজধানীর মর্যাদা পেয়েছে। এখনও রাজধানীর মর্যাদা অক্ষুন্ন রয়েছে। দেশের বর্ধনশীল শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা শীর্ষে। অনেক দিন ধরেই যানজট, শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণে ঢাকার বৈশ্বিক অবস্থান নিচের দিকে। বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষায় বরাবরই বাস-অযোগ্য মহানগরীর তকমা ধারণ করে আছে এ মহানগরী। সম্প্রতি ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় অনেকের ধারণা, পানিদূষণেও ঢাকা পিছিয়ে নেই।
রাজধানীতে শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ ও যানজট নিয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একজন সংসদ সদস্য। পয়েন্ট অব অর্ডারে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন মানুষকে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এতে এক দিনে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকা শহর অকার্যকর শহরে পরিণত হবে। ঢাকা এখন শব্দদূষণে এক নম্বরে, বায়ুদূষণেও এগিয়ে। ঢাকায় যারা বসবাস করেন, যানজটের কারণে তারা সকালে বের হলেও দুপুরে কাক্সিক্ষত জায়গায় পৌঁছাতে পারবেন কি না, এর নিশ্চয়তা নেই। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যানজটের কারণে বছরে ৮৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।’
রাজধানীর বাসিন্দারা কী পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সংসদ সদস্যের বক্তব্যে উঠে এসেছে। এরই মধ্যে এটি জাতীয় সংসদের কার্যবিবরণীতে স্থান পেয়েছে বলেই ধারণা। কিন্তু তাতে নগরবাসীর বিড়ম্বনা কমবে না। নগরবাসীর বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণে নীতিনির্ধারকদের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে।
বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বাস-অযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান পাওয়া বাস-অযোগ্য অন্য মহানগরীগুলোর বেশিরভাগই হয় যুদ্ধকবলিত, না হয় দারিদ্র্যপীড়িত। আমাদের রাজধানীতে এমন কোনো সমস্যা নেই। এটি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিবিশিষ্ট দেশের রাজধানী, যে দেশটি অন্য দেশগুলোর জন্য ‘রোল মডেল’। এ শহরও রোল মডেল হওয়ার কথা!
এমন নয় যে, রাজধানীকে বাসযোগ্য পরিকল্পিত শহর গড়ার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। তবু ঢাকার অধঃপতন দুঃখজনক।
আমাদের পরিকল্পনা আছে, প্রচেষ্টা আছে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা না থাকায় সব তৎপরতা সফল হচ্ছে না। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ ও যানজটই নয়, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোর দিক রাজধানী পিছিয়ে আছে।
নিরুপদ্রব ও শান্তিময় জীবনযাত্রার নির্মল বায়ু, বিশুদ্ধ পানি ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ঢাকা মহানগরের বাসিন্দারা যথাযথভাবে এসব নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন, খোদ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারাই বিব্রত হবেন।
আমাদের প্রধান শহর রাজধানী ঢাকায় কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে শহরে সাধারণ মানুষের আগমন অন্য শহরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। ফলে চলাচলের জন্য যানবাহনও বেশি, যানজটের মাত্রাও বেশি। আমরা মনে করি, রাজউক, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা সমন্বিত পদক্ষেপ নিলেই অবস্থার উত্তরণ সম্ভব। যানজট, জলাবদ্ধতা, পয়ঃনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশদূষণ প্রভৃতি সমস্যার সমাধানে এসব সংস্থা দায়িত্বশীল হলে ঢাকা সেরা শহরের খ্যাতিও পেতে পারে।