শেয়ার বিজ ডেস্ক: ২৪৩ মামলায় গ্রেপ্তার ২,৬৩০। ২,২৮৪ জনের রাজনৈতিক পরিচয় নেই। বিএনপির নেতা-কর্মী ২৬৯ জন। জামায়াত ও শিবিরের ৭৩ জন।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় পিকআপ ট্রাক চালান নাসির উদ্দিন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের সামনে তাঁর স্ত্রী বাবলী ছোট ছোট চার কন্যাসন্তান নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাশেই অঝোরে কাঁদছিলেন নাসিরের মা রুমেলা আক্তার। তাঁরা জানান, ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন গিয়ে বাসা থেকে নাসিরকে তুলে এনেছেন। তাঁরা নাসিরের খোঁজে এসেছেন।
শুধু নাসির নন, রাজধানীতে এখন প্রতিদিনই এমন অসংখ্য স্বজন ভিড় করছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়, বিভিন্ন থানা ও আদালতের সামনে। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ডিবি অফিসের সামনে এমন ৯টি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয় । আগের দিনও এমন আরও চারটি পরিবারকে পাওয়া যায় ডিবি কার্যালয়ের ফটকের সামনে। তাঁদের বেশির ভাগই দিনমজুর, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের স্বজন।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, তাঁরা কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করছেন না। তিনি সচিবালয়ে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ও ভিডিও ফুটেজ এবং সাক্ষীসাবুদ নিয়ে যাদের শনাক্ত করা গেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ভুলক্রমে যদি কেউ নিয়ে আসে তাহলে থানায় যাচাই করে যাঁদের নিরপরাধ মনে হচ্ছে, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কাজেই গণগ্রেপ্তার হচ্ছে না।
ঢাকার আদালত সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকায় ২৭০টি মামলায় ২ হাজার ৮৯১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক হিসাব বলছে, গত সোমবার পর্যন্ত রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ২৪৩টি মামলায় মোট ২ হাজার ৬৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৮৪ জনেরই কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি, যা মোট গ্রেপ্তারের ৮৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ কোনো দলের সঙ্গে তাঁদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাঁদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মী আছেন ২৬৯ জন, জামায়াতের ৬৩ এবং শিবিরের আছেন ১০ জন। এ ছাড়া গণ অধিকার পরিষদের ৩ এবং জেপির আছেন ১ জন, যা মোট গ্রেপ্তারের ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।
কোটা আন্দোলনকালে সহিংসতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতার কথা সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার বলা হলেও এত বেশি সংখ্যায় সাধারণ মানুষ গ্রেপ্তার হচ্ছেন কেন? এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা রয়েছে সহিংসতা বা অপরাধে জড়ানোর প্রমাণ নেই, এমন একজন নিরীহ মানুষকে যেন হয়রানি করা না হয়। এ বিষয়গুলো আমরা কঠোরভাবে তদারকি করছি। এ জন্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।’