Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:52 pm

ঢাকায় চার দিনে শনাক্ত বেড়েছে ১০৭ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৪ থেকে ২০ জুন সাত দিনে ঢাকা বিভাগে শনাক্ত রোগী বেড়েছে ১১৪ শতাংশ। এ তুলনা করা হয়েছে তার আগের সাত দিনের সঙ্গে। এরপর ঢাকায় শনাক্ত হওয়া কভিড-১৯-আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চার দিনে (২১ থেকে ২৪ জুন) ১০৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা যায়। এ চার দিনে ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছেন আট হাজার ৭৭০ জন। তার আগের সাত দিনে মোট শনাক্ত ছিল আট হাজার ২১৫ জন। ঢাকা শহরেই এখন সংক্রমণের হার প্রায় ১৩ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত চার দিনে ঢাকা বিভাগে শনাক্ত রোগীর হার সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী আছে ঢাকা শহরে। এখানে ২১ জুন শনাক্ত হন এক হাজার ২৯৪ জন, ২২ জুন শনাক্ত হন এক হাজার ৪৯৬ জন, ২৩ জুন শনাক্ত হন দুই হাজার ৬৪ জন ও ২৪ জুন শনাক্ত হন এক হাজার ৫৭২ জন। অর্থাৎ আগের সাত দিনের তুলনায় চার দিনেই ৫৫৫ জন বেশি শনাক্ত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঢাকায় এবং কম হারে শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। ঢাকার পর উচ্চহারে শনাক্ত হয়েছে রংপুর বিভাগে। এরপর আছে ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগ। তাছাড়া ওই সাত দিনে মৃত্যু হয়েছে ৪৩০ জনের। আর পরের চার দিনে মৃত্যু হয়েছে ৩২০ জনের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে খুলনায়। ঢাকায় মারা গেছেন ৬৯ জন এবং খুলনায় ১০০ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪০টি জেলা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে ১৫টি জেলা রয়েছে উচ্চ ঝুঁকিতে। আটটি জেলা রয়েছে মধ্যম ঝুঁকিতে। সংস্থাটি সংক্রমণে বাংলাদেশকে তিন ভাগে ভাগ করেছে। অতি উচ্চ ঝুঁকি, উচ্চ ঝুঁকি ও মধ্যম ঝুঁকি। বান্দরবানে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় এই জেলাকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

রিপোর্ট অনুযায়ী, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার সবকটিই উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা বিভাগের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। এ বিভাগে সংক্রমণ বেড়েছে ১১৪ দশমিক চার শতাংশ।

দেশে কভিড সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছে। ভারতীয় তথা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে। এ অবস্থায় সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিনের ‘শাটডাউন’ জারির সুপারিশ করেছে কভিড-১৯-বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

এদিকে কভিড-১৯-এর সংক্রমণ রোধে কমিটির শাটডাউন সুপারিশ যৌক্তিক বলে মনে করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, যেকোনো সময় শাটডাউনের ঘোষণা দেয়া হতে পারে।

দেশে কভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে মে মাসের শেষ দিকে। জুনে ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়লেও মাঝামাঝিতে লাফিয়ে বাড়তে থাকে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। বৃহস্পতিবার নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ছয় হাজার ৫৮ জন। ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা বিভাগের আশপাশের জেলাগুলোর মধ্যে গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুরে সংক্রমণের হার বেশি।

ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখতে আশপাশের সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ছোট যান কিংবা পায়ে হেঁটে রাজধানীতে ঢুকছে ও বের হচ্ছে মানুষ। পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়াও মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। বেশিরভাগই অফিস, চিকিৎসা ও স্বজনের মৃত্যুর কথা বলছেন। পুলিশ তাদের বাধা দিচ্ছে না। তবে চেকপোস্টের পাশ দিয়ে অসংখ্য মানুষকে হেঁটে ঢাকায় ঢুকতে ও বের হতে দেখা গেছে।

এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ঢাকার চারপাশের যেসব এলাকা থেকে ঢাকামুখী রোগী আসার কথা ছিল, সেসব স্থান বন্ধ করা গেলে ঢাকার ভেতর লকডাউন দেয়ার প্রয়োজন হবে না। কিন্তু যদি ঢাকার চারপাশের এলাকা থেকে মানুষকে ঠেকিয়ে রাখতে না পারি, তবে ঢাকার পরিস্থিতি নাজুক হবে।

কভিড-১৯-বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মনে করেন, সামনের দিনগুলোয় আরও বিপর্যয় আসছে। তার মতে, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না। সরকার এসব মানাতে পারবে বলেও মনে হচ্ছে না। সামনের দিনগুলোয় ঝুঁকি বাড়বে। জুন মাস তো শেষ হয়ে গেছে প্রায়। জুলাই-আগস্ট নাগাদ এরকম বাড়তে থাকবে। তারপর হয়তো কমতে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।