শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় আরও অনেক যাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণ আসেনি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ডিউটি অফিসার রাকিবুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রাত ৯টার দিকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করেছে।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া অফিসার আনোয়ার ইসলাম বলেন, মোট ৪টি বগিতে আগুন লেগেছে। ৯টা ৫ মিনিটে আগুনের সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট কাজ করছে। আরও একটি ইউনিট স্পটে যাচ্ছে।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেস (৭৯৫) দুপুর ১টায় বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসে। ট্রেনটির ঢাকায় পৌঁছার কথা রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। এর মধ্যে গোপীবাগে পৌঁছালে আগুনের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, ট্রেনে আগুনের ঘটনায় ৭টি ইউনিট কাজ করছে ঘটনাস্থলে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ভেতরে যাত্রী আটকে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি তথ্য নেই আমাদের কাছে।
নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির হরতাল অবরোধের মধ্যে গত দুই মাসে প্রায় তিনশ যানবাহন নাশকতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ট্রেনে আগুন দেয়া এবং রেললাইন কেটে রাখার কয়েকটি ঘটনায় অন্তত পাঁচজনের প্রাণ গেছে।
এদিকে আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটিতে পিকআপে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পঞ্চবটি রহমান নিটওয়্যারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হঠাৎ করেই একটি পিকআপে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। পরে এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফতুল্লা ফায়ার সার্ভিসের ফায়ারম্যান এহসানুল হক বলেন, ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই এলাকাবাসী আগুন নিভিয়ে ফেলে।
ফতুল্লা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া বলেন, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুন ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দোষীদের শনাক্তে পুলিশ কাজ করছে।
অন্যদিকে আমাদের রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, রাজশাহীর তিনটি উপজেলার চারটি ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া একটি ভোটকেন্দ্র থেকে দুটি তাজা ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে এই আগুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রয়েছে বাঘা উপজেলায় দুটি ভোটকেন্দ্র, মোহনপুরে একটি ও বাগমারায় একটি। তবে বাগমারার ওই ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
স্কুল চারটি হলো, বাঘা উপজেলার জুতনশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আড়ানী ঝিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহনপুরের মতিহার উচ্চবিদ্যালয় এবং বাগমারার আক্কেলপুর উচ্চবিদ্যালয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল হক জানান, বাঘার দুটি মোহনপুর ও বাগমারার একটি করে ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। পরে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাঘার ঝিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুরাদ আলী বলেন, বিদ্যালয়টিতে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রটি পরিষ্কার করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে অফিস কক্ষের ১৫টি চেয়ার, টেবিল, আলমারিসহ আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। ধারণা করছি, অফিসের পেছনের জানালার ফাঁক দিয়ে দুষ্কৃতকারীরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি থানায় জানানো হয়েছে। এছাড়া বাঘার জুতনশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত একটি কক্ষে আগুন দেয়া হয়েছে।
বাগমারার গনিপুর ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারিত একটি বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে জানালার কাচ ভেঙে কক্ষের কিছু আসবাব ও বইপত্র পুড়ে গেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, রাত দুইটার পর ঘটনাটি ঘটেছে। বিকট শব্দ ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। শুনে লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বিদ্যালয়ের ফটকে দুটি ককটেল জাতীয় বস্তু ফেলে যায়। স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবায় কল দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ সেখান থেকে দুর্বৃত্তের ফেলে যাওয়া একটি মানিব্যাগ উদ্ধার করে এবং ককটেলসদৃশ বস্তু দুটি ঘিরে রাখে।
বাগমারা থানার ওসি অরবিন্দ সরকার জানান, বিদ্যালয়ের জানালার কাচ ভেঙে গেছে। আইপিএসের ব্যাটারির ক্ষতি হয় এবং বইপুস্তক পুড়ে যায়। বিদ্যালয়ের ফটক থেকে উদ্ধার করা ককটেলসদৃশ বস্তু দুটি নিষ্ক্রিয় করার জন্য বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেয়া হয়েছে।
রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল হক বলেন, এই ঘটনাগুলোর তদন্ত শুরু করা হয়েছে। স্কুলে কীভাবে আগুন লেগেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর যারা ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে, তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।