ঢাকার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিকশিত হোক

রাজধানীতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তারা ঢাকার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিরূপণে জরিপ চালানোর যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাকে আমরা যথার্থ বলে মনে করি। বস্তুত দেশের অর্থনীতি ও শিল্পের প্রধান কেন্দ্র হলেও ঢাকার সম্ভাবনার ব্যাপারে সাম্প্রতিক কোনো তথ্য আমাদের হাতে নেই। সময়ের পরিবর্তনে রাজধানী পরিণত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিকাশমান শহরে। এ অবস্থায় এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ব্যাপারে কোনো জরিপ না থাকার বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের পরিকল্পনাহীনতাকেই হয়তো স্পষ্ট করে। আমরা মনে করি, এ ধরনের একটি জরিপ শিগগিরই করা দরকার। এতে সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করা যেমন সম্ভব হবে, তেমনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পরিকল্পনা প্রণয়নও হবে সহজ।

দেশের শহরে বাসকারী মানুষের ৪০ শতাংশই রয়েছে ঢাকায়। সরকারের মোট রাজস্বের ৩৩ শতাংশই আহরণ হয় এ নগরী থেকে। এ দুই তথ্যে একটি বিষয় স্পষ্ট, জীবনযাত্রার নানা জটিলতা সত্ত্বেও কিছু সামাজিক সেবা ও সুবিধার জন্য মানুষ যেমন ঢাকার ওপর নির্ভরশীল, তেমনি সরকার নির্ভরশীল রাজস্ব আয়ের জন্য। অনুষ্ঠানে এক বক্তা বলেছেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলোর বিকেন্দ্রীকরণ রাজধানীকন্দ্রিক রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না, ভেবে দেখা দরকার। নগরীটিতে যানজটের কারণে প্রতিবছর ২০-৩০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে, এ তথ্যও উল্লেখ করা প্রয়োজন। বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে যানজট অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। রাজধানীতে যোগাযোগ গতিশীল হলে এর বাণিজ্য সম্ভাবনাও বাড়বে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্র বিকেন্দ্রীকরণের কারণে রাজস্ব আয় যেটুকু কমে আসবে, বাণিজ্য সম্ভাবনা বাড়ানো গেলে তা অনেকটাই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। এজন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিতে বলবো সংশ্লিষ্টদের।

এখন যেসব মানুষ ঢাকার অধিবাসী, এটি তাদের সিংহভাগেরই জš§শহর নয় জীবিকাদায়িনী মাত্র। এটা ঠিক, জীবিকার প্রয়োজনে ঢাকাকে আমরা যেভাবে শোষণ করেছি, সেভাবে গড়ে তুলিনি। এটা করা গেলে বর্তমানের মতো দুরবস্থার সম্মুখীন হতে হতো না এ নগরীকে। বসবাসের অযোগ্য নগরীর তালিকায় ঢাকা যে উপরের দিকে রয়েছে, সে তথ্যও অনেকের জানা। এ পরিস্থিতিই সচেতন মানুষকে ঢাকাবিমুখ করার জন্য যথেষ্ট। বস্তুত ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশ লাভ করে মানুষকে কেন্দ্র করে। ঢাকা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এত সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠার পেছনে বড় কারণ এর জনসংখ্যা। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, এখন যেসব মানুষ ঢাকাকেন্দ্রিক অর্থনীতির প্রাণ, তারা এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে এর সম্ভাবনা কি একই রকম থাকবে? মানুষই যে ঢাকার সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা এবং একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ, তাও ভুলে গেলে চলবে না। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে এ শহর বড় ভূমিকা রাখবে, সন্দেহ নেই। সেজন্য বিদ্যমান জনসংখ্যার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকল্পনা নিতে হবে অর্থনীতির স্বার্থেই।

এক নগরকেন্দ্রিক উন্নয়নের কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। ভূতাত্ত্বিক গঠনের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান যে ঝুঁকিপূর্ণ, সেটিও আমাদের মনে রাখতে হবে। ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্য নগরের তুলনা করলে উন্নয়ন ও সামাজিকসেবায় বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। এটা কমানো না গেলে প্রতিদিন নতুন মানুষের ঢাকামুখী প্রবণতা কমানো যাবে না। পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ সহজ হবে। ওই অঞ্চলে দেশের দুটি বিভাগীয় প্রধান শহর খুলনা ও বরিশাল অবস্থিত। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এ দুই নগরীর রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। একইভাবে সম্ভাবনা রয়েছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, রংপুরসহ নতুন ঘোষিত অন্য বিভাগীয় শহরের। এগুলোর সঙ্গে এখন ঢাকার যোগাযোগ সহজ। আমরা চাই, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এসব শহরের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করতে এখনই মনোযোগ দেওয়া হোক। মানুষকে ওসব শহরমুখী করতে হলে শুধু ঢাকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করলে চলবে না, এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০