ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম

নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজধানীর বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। বেশ কয়েকটি আসনের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, আগের মতো নারী-পুরুষ ভোটারদের লাইন ছিল না। ভোটকক্ষ পুরো ফাঁকা। পোলিং অফিসার ও পোলিং এজেন্টরা অলস সময় পার করেছেন। কেন্দ্রের ভেতরে নৌকা ছাড়া অন্যান্য প্রতীকের পোলিং এজেন্ট দুজন থেকে তিনজন ছিলেন। অনেক প্রার্থীর এজেন্টও ছিলেন না। কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের নেতাকর্মীদেরও কোনো উপস্থিতি তেমন দেখা যায়নি। ভোটারসংখ্যা কম এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের যথেষ্ট অংশগ্রহণ না থাকায় কোনো ধরনের উত্তেজনাও দেখা যায়নি।

গতকাল রোববার বেলা ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-৫, ঢাকা-৮, ঢাকা-১০, ঢাকা-১৫, ঢাকা-১৪ ও ঢাকা-১৭ আসনের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর ছয় ঘণ্টায় ঢাকা-৫ আসনের শহীদ জিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের পুরুষ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৪৫১টি। এ কেন্দ্রে পুরুষ ভোটার ছিলেন দুই হাজার ২৫৭ জন। একই কেন্দ্রে ছয় ঘণ্টায় নারীদের ভোট পড়েছে ৫৫০টি। এ কেন্দ্রে মোট নারী ভোটার ছিলেন তিন হাজার ৬৭১ জন। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা রাশেদুল আলম ফরিদ বলেন, ভোটার উপস্থিতি একটু কম। তবে এখানে যারাই ভোট দিতে এসেছেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছেন, কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি।

তবে এই কেন্দ্রে প্রধান ফটকের সামনে সকালে পুলিশের সঙ্গে হট্টগোলে জড়িয়েছিলেন ক্ষমতাসীন প্রার্থীর লোকেরা। পুলিশ সদস্যরা জানান, আমরা যতক্ষণ আছি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে দেব না। যত ঝামেলাই হোক এ সমস্যা বাইরেই সমাধান হয়ে যাবে।

বাইরের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রের বাইরে অনেক কিছু হবে। সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে। কেন্দ্রের ভেতরে ঢোকার কোনো সুযোগ নেই। গত শনিবার রাতেও ঝামেলা করার চেষ্টা করা হয়েছে।

একই আসনের আর কে চৌধুরী কলেজের নারী ভোটার কেন্দ্রে প্রথম দুই ঘণ্টায় ১০ শতাংশ ভোট পড়ে। এখানে মোট নারী ভোটার ছিলেন দুই হাজার ৫৩৯ জন।  তবে পুরুষ কেন্দ্রে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৫০৫টি ভোট পড়েছে। এ কেন্দ্রে পুরুষ ভোটার ছিলেন মোট তিন হাজার ৪২ জন।

নারী কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন বলেন, এখানে কোনো সমস্যা নেই। বাইরে কী হচ্ছে, না হচ্ছে সেটা আমাদের বিষয় নয়। ভেতরে সবকিছু ঠিক আছে। কোনো ধরনের চাপ নেই। সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।

তবে এই কেন্দ্রে কয়েকজন ভোটার ভোট দিতে এসে বিপাকে পড়েছেন। প্রার্থীদের এজেন্টরা যে ভোটার সিরিয়াল দিয়ে পাঠাচ্ছেন, তার সঙ্গে ভোট দেয়া লোকের নামের মিল নেই। এমন একটি প্রমাণ মেলে এক নারী ভোটারের ক্ষেত্রে। এ কেন্দ্রে মোট নারী ভোটারসংখ্যা ছিল দুই হাজার ৫৩৯। তবে বিবি হালিমা নামের এক নারী ভোটারকে দুই হাজার ৮১০ নম্বর সিরিয়াল দিয়ে পাঠানো হয়। পোলিং অফিসাররা বলেন, এমন অনেক পেয়েছি। তবে মিল না পেলে কাউকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি।

ঢাকা-৫ আসনের রসুলপুর ৬১নং ওয়ার্ডের দনিয়া কলেজে স্বাধীনতা ভবন কেন্দ্রে পাঁচ ঘণ্টায় মাত্র ১৮০টি ভোট পড়ে, যা মোট ভোটের সাত শতাংশ। এ কেন্দ্রে নারী ও পুরুষ মিলে মোট দুই হাজার ৫৫০ ভোটার ছিলেন।

কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার এবিএম আনোয়ার হোসেন বলেন, সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ১৮০টি ভোট পড়েছে। কোনো প্রকার ঝামেলা নেই। সব এজেন্টই উপস্থিত ছিলেন।

একই আসনের ৭৯নং কেন্দ্রে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১২২টি ভোট পড়ে। এ কেন্দ্রে সবাই ছিল নারী ভোটার। মোট ভোটার এক হাজার ৭২৫ জন।

প্রিজাইডিং অফিসার আবু মনজুর বলেন, ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিচ্ছেন। কোনো চাপ নেই। ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এখানে ব্যালটের সঙ্গে লিস্টের সবকিছু মিললেই ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে। যাদের মিলছে না তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

ঢাকা-৮ আসনের শান্তিবাগ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রথম এক ঘণ্টায় মাত্র ১৫টি ভোট পড়ে। এ কেন্দ্রে গেট খোলা হয় নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিট পর। কেন্দ্রে নারী-পুরুষ মিলে মোট ভোটারসংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ৮১১। গেট খোলার পরে কেন্দ্রটিতে কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী সিøপ ছাড়া কেন্দ্রে ঢুকলে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে বের করে দেয়। সিøপ এনে ভোট দেয়ার অনুরোধ করে।

এ কেন্দ্রে নর্থ সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ভোট দিতে এসেও ভোট দিতে পারেননি। তিনি জানান, সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ভোট দিতে এসেছি। ভেতরে ২০ মিনিট অপেক্ষা করেও ভোট দিতে পারিনি। আমার ভোটার তালিকা শান্তিবাগ উচ্চ বিদ্যালয় দেখালেও পোলিং অফিসাররা বলেন, এখানে ভোটার তালিকা নেই।

একই কেন্দ্রে ভোট দিয়ে আসা মিনু আক্তার জানান, ভোটার উপস্থিত আগেরবারের চেয়ে একটু কম। তবে আগের চেয়ে সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দিতে পেরেছি।

একই আসনের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পুরুষ কেন্দ্রে এক ঘণ্টায় ৪৩টি ভোট পড়ে। নারী কেন্দ্রে পড়ে ২৪টি। এখানে এক হাজার ৯৯১ পুরুষ ও এক হাজার ৮৪৯ নারী ভোটার ছিল।

এই কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বলেন, ভোট শূন্য অথবা ২০ শতাংশ যা-ই পড়ুক, কোনো অনিয়ম করতে দেয়া যাবে না। ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ সময় তিনি ভোটারদের মতামতও নেন।

পরিবাগের খোদেজা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ৩টায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জানান, বেলা ২টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্র মোট ভোট পড়েছে ২৬০টি। কেন্দ্রে মোট ভোটারসংখ্যা দুই হাজার ৫৫০।

এছাড়া ঢাকা-১৭ আসনে মিরপুরে সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে একটি মহিলা ভোটকেন্দ্রে ভোট শুরুর প্রথম ঘণ্টায় ব্যালট বাক্সে ভোট পড়েছে ৩০টি। এ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ভোটার সংখ্যা এক হাজার ৮৭৩টি। সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা-১৫ আসনের পূর্ব শেওড়াপাড়ার হাজী আশরাফ আলী হাই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুরুষ-নারী মিলিয়ে ভোটকেন্দ্র আছে সাতটি; এ সাত কেন্দ্রের মোট ভোটারসংখ্যা ১৩ হাজার ৯৬৪। কেন্দ্রের প্রধান ফটকে প্রায় ১০ মিনিট সময় দাঁড়িয়ে পাঁচ ভোটারকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

ঢাকা-১৪ আসনের কামাল আহমেদ মজুমদার স্কুল ও কলেজ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। কিছুক্ষণ পরপর একজন-দুজন এসে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। এ স্কুল ও কলেজের দুটা ভবনে দুটা কেন্দ্র, ভোটার এখানে প্রায় ছয় হাজার। এ কেন্দ্রেও কেবল নৌকার এজেন্ট ছিলেন। ঢাকা-১২ আসনের মগবাজার টিএনটি স্কুলে বেলা ১১টা পর্যন্ত আট শতাংশে ভোট পড়েছে।

গতকাল রোববার সকাল ৮টায় জাতীয় সংসদের ২৯৯ আসনে ৪২ হাজার কেন্দ্রে একযোগে শুরু হওয়া ভোট বিরতিহীনভাবে চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০