নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানী ঢাকা শহরের প্রায় সব এলাকাতেই গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ হচ্ছে। সচিবালয়ের চারপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করার পরেও সেখানে শব্দদূষণ বন্ধ হয়নি। ঢাকার অন্য এলাকাগুলোতেও নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ হচ্ছে। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) সমীক্ষায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ক্যাপসের যৌথ উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ওই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘তীব্র শব্দদূষণের কবলে ঢাকাবাসী’ শীর্ষক ওই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন গবেষণা দলের প্রধান ও ক্যাপসের পরিচালক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, সচিবালয় এলাকাকে নীরব ঘোষণার আগে ও পরে অর্থাৎ গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই এলাকায় জরিপ চালানো হয়। স্বয়ংক্রিয় সাউন্ড লেভেল মিটারের সাহায্যে ১২টি স্থানে দিনব্যাপী ৩০০ বার উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, সচিবালয় এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা ৫০ ডেসিবেল থাকার কথা ছিল। কিন্তু জরিপে দেখা গেছে, দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা কখনোই ৫০ ডেসিবেলের নিচে ছিল না।
গবেষণাটিতে দেখা গেছে, ১২টি স্থানের প্রতিটিতেই দিনের বেলায় শতভাগ সময় নীরব এলাকার জন্য প্রযোজ্য মানমাত্রার (৫০ ডেসিবেল) চেয়ে বেশি মাত্রায় শব্দ হয়েছে। ১২টি স্থানের মধ্যে সচিবালয়ের পশ্চিমে মসজিদের পাশের এলাকা বাদে সব জায়গায় ৭০ ভাগের বেশি সময় ধরে ৭০ ডেসিবেল (তীব্রতর) এর বেশি শব্দের মাত্রা ছিল। সামগ্রিকভাবে ১২টি স্থানে সম্মিলিতভাবে ৯১ দশমিক ৯৯ ভাগ সময় ৭০ ডেসিবেল (তীব্রতর) এর বেশি মাত্রার শব্দ হয়েছে। সর্বোচ্চ সময় ধরে তিনটি স্থানে শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ছিল। সেগুলো হলো পল্টন বাসস্ট্যান্ড (১০০ ভাগ সময়), জিরো পয়েন্ট (৯৯ দশমিক ৪ ভাগ সময়) এবং কদম ফোয়ারা (৯৯ দশমিক দুই ভাগ সময়)। এ তিনটি জায়গায় নিয়মিতভাবে শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবেলের বেশি ছিল।
এছাড়া ক্যাপসের গবেষণাদল ঢাকা শহরের ৭০টি এলাকায় শব্দদূষণ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। গবেষণায় দেখা যায়, নীরব, আবাসিক ও মিশ্র এলাকার ক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা ১০০ ভাগ সময় আদর্শ মানের ওপরে ছিল (নীরব এলাকার আদর্শ মান ৫০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকার আদর্শ মান ৫৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকার আদর্শ মান ৬০ ডেসিবেল)। বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের মাত্রা আদর্শ মানের চেয়ে ৯৭ দশমিক ৫৮ ভাগ সময় বেশি মাত্রায় ছিল (বাণিজ্যিক এলাকার আদর্শ মান ৭০ ডেসিবেল)। শিল্প এলাকায় শব্দের মাত্রা আদর্শ মানের চেয়ে ৭১ দশমিক ৭৫ ভাগ সময় বেশি মাত্রায় ছিল (শিল্প এলাকার আদর্শ মান ৭৫ ডেসিবেল)।
বাপার নির্বাহী সহসভাপতি মো. আবদুল মতিনের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন। এতে বক্তব্য রাখেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক স্থপতি মুহাম্মাদ আলী নকী, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী।