নিজস্ব প্রতিবেদক : উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপের প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের চার বিভাগে ভারি বর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়াবিদ একেএম রুহুল কুদ্দুছ জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা, বরিশাল, চট্টগাম ও ঢাকা বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি (২৩-৪৩ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে ভারি (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে।
এরই মধ্যে ঢাকায় গতকাল সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর দুপুর থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে গেছে। এতে বাড়ছে শীতের তীব্রতা।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি গতকাল দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করেছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
নিম্নচাপটির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
নিম্নচাপটির কেন্দ্রের ৪৪ কিমি এরই মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের প্রভাবে কক্সবাজারে ঘুরতে যাওয়া সাত শতাধিক পর্যটক বৈরী আবহাওয়ায় আটকা পড়েছেন। এছাড়া ভ্রমণে আসা তিন হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে পারছেন না। নি¤œচাপের প্রভাবে সাগরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বজায় থাকায় গতকাল সকাল থেকে টেকনাফ থেকে কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিন যায়নি। ফলে পর্যটকরা ফিরতে পারছেন না। তবে আটকে পড়া পর্যটকরা নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। আটকে পড়া পর্যটকরা গত শুক্রবার সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণে গিয়েছিলেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, নি¤œচাপটি আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে গভীর নি¤œচাপ আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতর থেকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাগর ও নাফ নদীতে মাছ শিকার ও পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদের ব্যবস্থাপক মো. শাহ আলম বলেন, সাগর উত্তাল ও বৈরী আবহাওয়ায় জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে ভ্রমণে আসা সাত শতাধিক পর্যটক দ্বীপে আটকা পড়েছেন। তারা বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে নিরাপদে আছেন। সাগর স্বাভাবিক হয়ে গেলে সেন্ট মার্টিনে আটকাপড়া পর্যটকদের ফিরিয়ে আনা হবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক গণমাধ্যমকে বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে নৌরুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেন্ট মার্টিনে আটকে পড়া পর্যটকদের খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। তারা সবাই নিরাপদে আছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।