নিজস্ব প্রতিবেদক:২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় যাত্রা করে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা উবার। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ কোম্পানিটির সেবা দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় ঢাকায়। আজ এ সেবার এক বছর পূর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে আরও কয়েকটি কোম্পানি অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা চালু করেছে। তবে এখনও এ-সংক্রান্ত নীতিমালাই চূড়ান্ত হয়নি। ফলে নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই ঢাকায় সেবা দিয়ে যাচ্ছে উবার।
সূত্রমতে, চালুর কিছুদিনের মধ্যে ভাড়া বাড়ালেও পরে হ্রাস করে উবার। এছাড়া উবার প্রিমিয়ার ও উবার মোটো চালু নামক আরও দুটি সেবা চালু করা হয়েছে। বর্তমানে উবার এক্সে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১৮ টাকা। আর ভিত্তি ভাড়া হবে ৪০ টাকা। তবে যাত্রাপথের সময়ের জন্য প্রতি মিনিটের চার্জ তিন টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এতে বনানী ১১ নং সড়ক থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ভাড়া পড়বে ২৯০ টাকা। এ পথের দূরত্ব ১০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার।
এদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর উবার প্রিমিয়ার সেবা চালু করা হয়। এতে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া পড়বে ২২ টাকা। আর ভিত্তি ভাড়া হবে ৮০ টাকা। তবে যাত্রাপথের সময়ের জন্য প্রতি মিনিটের চার্জ তিন টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এতে বনানী ১১ নং সড়ক থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ভাড়া পড়বে ৩৭০ টাকা। এছাড়া গত ১৪ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে উবার মোটো, যা মূলত অ্যাপভিত্তিক বাইক সার্ভিস। এতে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা। আর ভিত্তি ভাড়া ৩০ টাকা। তবে যাত্রাপথের সময়ের জন্য প্রতি মিনিটের চার্জ এক টাকা হারে প্রযোজ্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় দ্রুত বাড়ছে অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সিসেবা উবারের ব্যবহার। বর্তমানে পাঁচ হাজারের বেশি গাড়ি চলছে উবারের অধীনে। ঢাকায় উবারের ১৮০ দিনে একজন চালক এক হাজার ৬৭১টি ট্রিপ সম্পন্ন করেছেন। আর একজন যাত্রী ট্রিপ নিয়েছেন ৩৯১টি। ৭৫ শতাংশ ট্রিপের ক্ষেত্রে রাইড রিকোয়েস্ট করার পর চালকদের পৌঁছানোর সময় আট মিনিট। গন্তব্য হিসেবে এয়ারপোর্ট রোড, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও গুলশান ২-এ বেশি গিয়ে থাকেন উবার যাত্রীরা। আর উবারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে সকাল ৮-১০টা ও সন্ধ্যা ৬ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
যদিও গত এক বছরে চূড়ান্ত হয়নি রাইড শেয়ারিং নীতিমালা। তাই এ নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে এ-সংক্রান্ত এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সুপারিশ করা হয়, রাইড শেয়ারিং সার্ভিস তথা উবারের ভাড়া সিএনজি অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাবের চেয়ে বেশি হতে পারবে না।
বৈঠকে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসটি বিশেষ ধরনের সেবা হওয়ায় প্রস্তাবিত এনলিস্টমেন্ট ফি বাড়ানো। এক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের মতামত নিতে হবে। এছাড়া রাইড শেয়ারিং-সংক্রান্ত কোনো তথ্য ও উপাত্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা বিআরটিএ বা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ বা সরবরাহ করতে পারবে না। রাইড শেয়ারিং সার্ভিস যাত্রীর তথ্য বা সার্ভিস পরিচালনাসংক্রান্ত তথ্য শুধু বাংলাদেশে সংরক্ষণ করবে।
সূত্র জানায়, বৈঠকের পর সবার সিদ্ধান্ত সংবলিত খসড়া নীতিমালাটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও সবার মতামত পাওয়া যায়নি। মতামতের ভিত্তিতে খসড়া নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে মন্ত্রিসভায়।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং নীতিমালা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। দ্রুতই এটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।