নিজস্ব প্রতিবেদক: নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে দুর্ঘটনার ঠিক এক সপ্তাহ পর নিহতদের মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ কফিনবন্দি অবস্থায় দেশে আনা হয়েছে। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি উড়োজাহাজ কাঠমান্ডু থেকে রওনা হয়ে বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিমানবন্দরে নিহতদের মরদেহ আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন। বিমান পরিবহনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামালও এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
উড়োজাহাজ থেকে প্রথমেই নামানো হয় বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের পাইলট আবিদ সুলতানের মরদেহ। তার কফিন একটি অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পর একে একে অন্যদের কফিনও নামিয়ে আনা হয়। বিমানবন্দর থেকে কফিনগুলো অ্যাম্বুলেন্সে করে বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়। সেখানে আত্মীয়, বন্ধু ও স্বজনদের দেখার সুযোগ দেওয়া হয় ওই ২৩ যাত্রীর লাশ। বিমান দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীদের স্বজনদের মধ্যে যারা কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলেন, তাদেরও ইউএস-বাংলার একটি বিশেষ ফ্লাইটে গতকাল সোমবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। বিমানবন্দর থেকে আগেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে।
এদিকে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা দুপুরের পর থেকেই আর্মি স্টেডিয়ামে জড়ো হতে শুরু করেন। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে স্টেডিয়ামের পরিবেশ। ২৩ পুলিশ কর্মকর্তা আর্মি স্টেডিয়ামে নিহত ২৩ জনের স্বজনদের দায়িত্ব নেন। মরদেহ হস্তান্তর করার জন্য প্রত্যেকের আলাদা ফাইলে তথ্য সংগ্রহ ও ফরম পূরণের আনুষ্ঠানিকতা এগিয়ে রাখেন তারা।
উল্লেখ্য, ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস-২১১ গত ১২ মার্চ ঢাকা থেকে রওনা হয়েছিল চার ক্রুসহ ৭১ আরোহী নিয়ে, সেদিনও ছিল সোমবার। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হলে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৪৯ আরোহীর মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ শনাক্ত করার পর নেপালের কর্তৃপক্ষ কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। গতকাল সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে প্রবাসী বাংলাদেশি, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ইউএস-বাংলার উপস্থিত কর্মকর্তারা তাদের জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে ২৩টি কফিন পাঠানো হয় ত্রিভুবন বিমানবন্দরে।
এই ২৩ জনের মধ্যে ইউএস-বাংলার পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশীদ এবং কেবিন ক্রু খাজা হোসেন মো. শফি ও শারমিন আক্তার নাবিলা রয়েছেন। আর বাকি ১৭ যাত্রীর মধ্যে রয়েছেন ফয়সাল আহমেদ, বিলকিস আরা, বেগম হুরুন নাহার বিলকিস বানু, আখতারা বেগম, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, রকিবুল হাসান, হাসান ইমাম, আঁখি মণি, মিনহাজ বিন নাসির, ফারুক হোসেন প্রিয়ক, তার মেয়ে প্রিয়ন্ময়ী তামারা, মতিউর রহমান, এসএম মাহমুদুর রহমান, তাহিরা তানভিন শশী রেজা, বেগম উম্মে সালমা, মো. নুরুজ্জামান, রফিক জামান, তার স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা ও তাদের ছেলে অনিরুদ্ধ জামান। ওই দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে আলিফুজ্জামান, পিয়াস রায় ও নজরুল ইসলামের মরদেহ রোববার পর্যন্ত শনাক্ত করা বাকি ছিল।
নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস গতকাল সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, ওই তিন বাংলাদেশির মধ্যে আরও একজনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে, তবে নেপালি কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। ‘আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে আগামীকাল (বুধবার) দেশে আনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশ চিকিৎসক দলের সদস্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ এর আগে জানিয়েছিলেন, চিহ্ন দেখে বা অন্যভাবে ওই তিনজনকে শনাক্ত করা না গেলে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।