১৩৩৫ কোটি টাকা বেশি ব্যয়ে কাজ পাচ্ছে চীনের সিএমসি

 

ইসমাইল আলী: উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ সহজ করতে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সেতু বিভাগ। প্রকল্পটির আওতায় বিমানবন্দর সড়ক থেকে আশুলিয়া ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও নবীনগরে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রাক্কলনের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ পাচ্ছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করেছে সেতু বিভাগ। এতে দেখা যায়, ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হবে ১২৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা ১০ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১১১ কোটি ৭৮ লাখ ডলার বা আট হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। এ হিসেবে ১৭ কোটি ১২ লাখ ডলার বা এক হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা বেশি ব্যয়ে কাজ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ৩৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত নেই। এ ব্যয় সরকারি তহবিল থেকে বহন করতে হবে। এতে কমপক্ষে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করবে সিএমসি। ২০১৫ সালে এটি নির্মাণে সমঝোতা স্মারক সই করে সেতু বিভাগ। আর গত বছর এটি নির্মাণে চূড়ান্ত প্রস্তাব দেয় কোম্পানিটি। এরপর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয় এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ার স্ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল এবং বাংলাদেশের ডেভ কনসালটেন্টস ও এসিই কনসালটেন্টস। এতে দেখা যায়, ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হবে ছয় হাজার ৩৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এক্সপ্রেসওয়েটিতে ওঠানামার র‌্যাম্প নির্মাণে ব্যয় হবে ১৮০ কোটি ৫৬ লাখ ও টোল প্লাজায় ১৪০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর নবীনগর ফ্লাইওভারটি নির্মাণে ব্যয় হবে ১২৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

প্রকল্পটির আওতায় নিচের ১৫ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ করতে হবে। পাশাপাশি দুই লেনের সেতু নির্মাণ করতে হবে। এতে ব্যয় হবে ৭৭৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর ভূগর্ভস্থ পরিষেবা সংযোগ স্থানান্তর ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে ব্যয় হবে ২৭০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এছাড়া নকশা প্রণয়নে ২০৭ কোটি ও নির্মাণ তত্ত্বাবধানে পরামর্শক ব্যয় হবে ১৩৮ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে (জমি অধিগ্রহণ ছাড়া) ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১০ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। বৈদেশিক মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০১ কোটি দুই লাখ ডলার। যদিও এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে (জমি অধিগ্রহণ ছাড়া) ১৪৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার প্রস্তাব করে সিএমসি। এ হিসেবে ৪৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার বা তিন হাজার ৭৬২ কোটি টাকা বেশি ব্যয় প্রস্তাব করে কোম্পানিটি।

এদিকে ভূমিকম্প ঝুঁকি বিবেচনায় পরে এক্সপ্রেসওয়ের পাইলের গভীরতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয় সেতু বিভাগ। এর ভিত্তিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় প্রাক্কলন বেড়ে দাঁড়ায় ১২৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার বা ১১ হাজার ৯৮৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এরপর সিএমসির সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ব্যয় চূড়ান্তে নেগোসিয়েশনে (দরকষাকষি) বসে সেতু বিভাগের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। গত ৫ ও ৬ মার্চ দুই দফা বৈঠক করা হয়। এতে ১৩২ কোটি ৪৪ লাখ ডলারে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে সম্মত হয় চীনের সিএমসি।

পরে নির্মাণ-পরবর্তী পাঁচ বছরের এক্সপ্রেসওয়ে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও সিএমসিকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আরও সাত কোটি ৬৩ লাখ ডলার অতিরিক্ত দাবি করে কোম্পানিটি। এতে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৪০ কোটি ডলার।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ ও ২০ মার্চ আবারও সিএমসির সঙ্গে নেগোসিয়েশন বৈঠকে বসে সেতু বিভাগের কারিগরি কমিটি। এতে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে ১২৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়। তবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি রক্ষণাবেক্ষণসহ চূড়ান্ত ব্যয় নির্ধারণ করে ১১১ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। এ হিসেবে ১৫ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ব্যয়ে চুক্তি সইয়ের সুপারিশ করা হয়।

জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের ব্যয় নির্ধারণে সিএমসির সঙ্গে নেগোসিয়েশন চলছে। এরপর তা যাবে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে। সেখানে অনুমোদনের পর সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন হবে। তাই এখনই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।

জানা গেছে, ব্যয় চূড়ান্তের পরও এটি বাড়বে বলে মনে করছেন সেতু বিভাগ-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নবীনগরে ফ্লাইওভারের পরিবর্তে ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এটি নির্মিত হবে অনেকটা কুড়িল-বিশ্বরোডে নির্মিত ইন্টারচেঞ্জের আদলে। ইপিজেডের গাড়িগুলোকে বাড়তি সুবিধা দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে নির্মাণ ব্যয় আরও বাড়বে।

এদিকে এক্সপ্রেসওয়েটির অর্থায়নও অনেকটা অনিশ্চিতের মধ্যে পড়ে গেছে। সম্প্রতি চীনা দূতাবাসের কমার্শিয়াল কনসুলার এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠায় সেতু বিভাগে। এতে বলা হয়, ২০১৫ সালের মে মাসে প্রকল্পটিতে অর্থায়নে সম্মতি দেয় চীনের এক্সিম ব্যাংক। এর দুই বছরের মধ্যে ঋণচুক্তি সই করতে হবে। তবে এখনও ঠিকাদারের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি সই হয়নি। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না গ্রহণ করলে প্রকল্পটির ঋণ নিশ্চয়তা বাতিল হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত উদ্যোগ নিতে সেতু বিভাগকে অনুরোধ করা হয়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ঋণ নিশ্চয়তা বহাল রাখতে আগ্রহী সেতু বিভাগ। এজন্য শিগগিরই চীনা দূতাবাসে ও দেশটির এক্সিম ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হবে। পাশাপাশি চুক্তি সইয়ের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করা হবে।

উল্লেখ্য, এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০ জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা করিডোরে যানজট অনেকাংশে কমে আসবে। আবার নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা বা চট্টগ্রামগামী ওই এলাকার যানবাহনকে ঢাকার যানজটের মধ্যে ঢুকতে হবে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০