ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে: সিএমসির সঙ্গে প্রাথমিক নির্মাণ চুক্তি সই

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন করবে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)। চীনের অর্থায়নে জিটুজিতে এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এজন্য গতকাল সেতু ভবনে সিএমসির সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি বা পয়েন্টস অব অ্যাগ্রিমেন্ট সই করে সেতু কর্তৃপক্ষ।

এক্সপ্রেসওয়েটির ব্যয় চূড়ান্তকরণসহ পয়েন্টস অব অ্যাগ্রিমেন্ট সইয়ে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেতু সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ সিএমসির প্রতিনিধিরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে ঢাকা শহরের উত্তরাঞ্চল সাভার, আশুলিয়া ও ইপিজেডসংলগ্ন শিল্প এলাকার যানজট নিরসন এবং দ্রুত যোগাযোগের সুবিধার্থে। দীর্ঘদিন প্রকল্পটি নিয়ে জটিলতা থাকলেও অবশেষে সিএমসির সঙ্গে নির্মাণচুক্তিতে সম্মতি দিয়েছে সেতু বিভাগ। এজন্য গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি নির্মাণব্যয়ের প্রস্তাব করেছিল ১২৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

গত ২৫ মার্চ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিভিন্ন স্থানে নতুন করে র‌্যাম্প সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়। তাই ‘স্কুপ অব ওয়ার্ক’ সংযোজন করে আরও ৭ কোটি ডলার ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। যদিও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আরও ১৭ কোটি ১২ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা কম ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল।

সেতু বিভাগের তথ্যমতে, চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করবে সিএমসি। ২০১৫ সালে এটি নির্মাণে সমঝোতা স্মারক সই করে সেতু বিভাগ। আর গত বছর এটি নির্মাণে চূড়ান্ত প্রস্তাব দেয় কোম্পানিটি। এরপর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয় এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ার স্ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল এবং বাংলাদেশের ডেভ কনসালট্যান্টস ও এসিই কনসালট্যান্টস। এতে দেখা যায়, ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হবে ৬ হাজার ৩৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এক্সপ্রেসওয়েটিতে ওঠানামার র‌্যাম্প নির্মাণে ব্যয় হবে ১৮০ কোটি ৫৬ লাখ ও টোল প্লাজায় ১৪০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। নবীনগর ফ্লাইওভারটি নির্মাণে ব্যয় হবে ১২৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

প্রকল্পটির আওতায় নিচের ১৫ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি দুই লেনের সেতু নির্মাণ করতে হবে। এতে ব্যয় হবে ৭৭৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর ভূগর্ভস্থ পরিষেবা সংযোগ স্থানান্তর ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে ব্যয় হবে ২৭০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এছাড়া নকশা প্রণয়নে ২০৭ কোটি ও নির্মাণ তত্ত্বাবধানে পরামর্শক ব্যয় হবে ১৩৮ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে (জমি অধিগ্রহণ ছাড়া) ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১০ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। বৈদেশিক মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০১ কোটি দুই লাখ ডলার। যদিও এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে (জমি অধিগ্রহণ ছাড়া) ১৪৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার প্রস্তাব করে সিএমসি। এ হিসাবে ৪৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার বা ৩ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা বেশি ব্যয় প্রস্তাব করে কোম্পানিটি।

এদিকে ভূমিকম্প ঝুঁকি বিবেচনায় পরে এক্সপ্রেসওয়ের পাইলের গভীরতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয় সেতু বিভাগ। এর ভিত্তিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় প্রাক্কলন বেড়ে দাঁড়ায় ১২৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। এরপর সিএমসির সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণব্যয় চূড়ান্তে নেগোসিয়েশনে (দরকষাকষি) বসে সেতু বিভাগের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। গত ৫ ও ৬ মার্চ দুই দফা বৈঠক করে কমিটি। এতে ১৩২ কোটি ৪৪ লাখ ডলারে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে সম্মত হয় সিএমসি।

পরে নির্মাণ-পরবর্তী পাঁচ বছরের এক্সপ্রেসওয়ে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও সিএমসিকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আরও ৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার অতিরিক্ত দাবি করে কোম্পানিটি। এতে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৪০ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে ১৩ ও ২০ মার্চ আবারও সিএমসির সঙ্গে নেগোসিয়েশন বৈঠকে বসে সেতু বিভাগের কারিগরি কমিটি। এতে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে ১২৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়। তবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি রক্ষণাবেক্ষণসহ চূড়ান্ত ব্যয় নির্ধারণ করে ১১১ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। এ হিসাবে ১৫ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ব্যয়ে চুক্তি সইয়ের সুপারিশ করা হয়।

এদিকে নবীনগর ফ্লাইওভারের পরিবর্তে ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেতু বিভাগ। আরও কিছু কাজ যুক্ত করা হয়েছে। এতে সবশেষে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তবে ৩৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত নেই। এটি যুক্ত হলে ব্যয় আরও দুই হাজার কোটি টাকা বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০ জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা করিডোরে যানজট অনেকাংশে কমে আসবে। আবার নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা বা চট্টগ্রামগামী ওই এলাকার যানবাহনকে ঢাকার যানজটের মধ্যে ঢুকতে হবে না।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০