নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ সহজ করতে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করবে সেতু বিভাগ। প্রকল্পটির আওতায় বিমানবন্দর সড়ক থেকে আশুলিয়ার ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও নবীনগরে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। জি-টু-জি ভিত্তিতে এটি নির্মাণে গতকাল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে চুক্তি সই করে সেতু বিভাগ।
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও সিএমসির চেয়ারম্যান রুয়ান গুয়ান নিজ নিজ পক্ষে চুক্তি সই করেন।
উল্লেখ্য, জিটুজি ভিত্তিতে প্রাক্কলনের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করতে যাচ্ছে সিএমসি।
গত ৬ নভেম্বরে পাঠানো এ প্রস্তাব ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন করা হয়। বলা হয়েছে, ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করতে হবে পাঁচ হাজার ৯৫১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আর চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউওরমেন্ট অ্যান্ড কন্সট্রাকশন (ইপিসি) টার্ন কি চুক্তির আওতায় সিএমসি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
গত ২৪ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়।
এর আওতায় ২৪ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে, ১০ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার ওঠানামার র্যাম্প, এক দশমিক ৯২ কিলোমিটার ফ্লাইওভার, ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার দুই লেনের সার্ভিস সড়ক পুনর্নির্মাণ, দুই দশমিক ৭২ কিলোমিটার সেতু, ৫০০ কিলোমিটার রেলওভারপাস ছাড়া ১৮ কিলোমিটার ড্রেনেজ ও ডাক্ট এবং পাঁচটি টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, টেকনিক্যাল কমিটি এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে ব্যয় প্রস্তাব করেছিল ১২৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তবে গত ২৫ মার্চ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিভিন্ন স্থানে নতুন করে র্যাম্প সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়। তাই ‘স্কুপ অব ওয়ার্ক’ সংযোজন করে আরও সাত কোটি ডলার ডলার ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। যদিও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আরও ১৭ কোটি ১২ লাখ ডলার বা এক হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা কম ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল।
সেতু বিভাগের তথ্যমতে, চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করবে সিএমসি। ২০১৫ সালে এটি নির্মাণে সমঝোতা স্মারক সই করে সেতু বিভাগ। আর গত বছর এটি নির্মাণে চূড়ান্ত প্রস্তাব দেয় কোম্পানিটি। এর পর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয় এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ার স্ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল এবং বাংলাদেশের ডেভ কনসালটেন্টস ও এসিই কনসালটেন্টস। এতে দেখা যায়, ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হবে ছয় হাজার ৩৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এক্সপ্রেসওয়েটিতে ওঠানামার র্যাম্প নির্মাণে ব্যয় হবে ১৮০ কোটি ৫৬ লাখ ও টোল প্লাজায় ১৪০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর নবীনগর ফ্লাইওভারটি নির্মাণে ব্যয় হবে ১২৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
প্রকল্পটির আওতায় নিচের ১৫ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি দুই লেনের সেতু নির্মাণ করতে হবে। এতে ব্যয় হবে ৭৭৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর ভূগর্ভস্থ পরিষেবা সংযোগ স্থানান্তর ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে ব্যয় হবে ২৭০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এছাড়া নকশা প্রণয়নে ২০৭ কোটি ও নির্মাণ তত্ত্বাবধানে পরামর্শক ব্যয় হবে ১৩৮ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে (জমি অধিগ্রহণ ছাড়া) ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১০ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, বৈদেশিক মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০১ কোটি দুই লাখ ডলার। যদিও এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে (জমি অধিগ্রহণ ছাড়া) ১৪৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার প্রস্তাব করে সিএমসি। এ হিসেবে ৪৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার বা তিন হাজার ৭৬২ কোটি টাকা বেশি ব্যয় প্রস্তাব করে কোম্পানিটি।
এদিকে ভূমিকম্প ঝুঁকি বিবেচনায় পরে এক্সপ্রেসওয়ের পাইলের গভীরতা বাড়ানোর পরামর্শ করে সেতু বিভাগ। এর ভিত্তিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় প্রাক্কলন বেড়ে দাঁড়ায় ১২৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। এর পর সিএমসির সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ব্যয় চূড়ান্ত করার জন্য নেগোসিয়েশনে (দর কষাকষি) বসে সেতু বিভাগের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি এবং গত ৫ ও ৬ মার্চ দুই দফা বৈঠক করে। এতে ১৩২ কোটি ৪৪ লাখ ডলারে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে সম্মত হয় চীনের সিএমসি।
পরে নির্মাণ-পরবর্তী পাঁচ বছরের এক্সপ্রেসওয়ে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও সিএমসিকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আরও সাত কোটি ৬৩ লাখ ডলার অতিরিক্ত দাবি করে কোম্পানিটি। এতে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার, তবে ১৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলারে চূড়ান্ত হয়। এ হিসেবে ১৫ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ব্যয়ে চুক্তি সইয়ের সুপারিশ করা হয়।